সোমবার, ডিসেম্বর ০৩, ২০১২

রেখাপাত (এক)

বর্তমান চাকরিতে যোগদানের পর একবার অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম, সম্ভবত ২০০১ খ্রিস্টাব্দে। তখন আমি কক্সবাজার শহরে থাকতাম। আমি জীবনে কখনো স্যালাইন নিইনি শিরায়। সেবার কিন্তু নিতে হয়েছিল। যে ডাক্তার আমার চিকিৎসা করছিলেন তিনি এমবিবিএস হলেও সরকারি চাকরি করতেন না। নিজের বাসস্থানে চেম্বার করতেন তিনি।

তাঁর চিকাৎসায় পুরোপুরি সুস্থ হতে দিন দশেক লেগেছিল আমার। কর্মক্ষেত্রে এই দিন দশেকের অনুপস্থিতি আমার অর্জিত সিএল (ক্যাজুয়াল লিভ) থেকে ভোগ করতে চাইনি আমি, যদিও অর্জিত সিএল জমা ছিল। সুস্থ হয়ে কাজে যোগদান করে তাই আমি ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্রসহ এমএল (মেডিক্যাল লিভ)-এর জন্য আবেদন করলাম। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানালেন যে, কেবল ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র সংযোজন করলে কাজ হবে না, ডাক্তার কর্তৃক (চিকিৎসা করেছেন মর্মে) প্রদত্ত সনদপত্র সংযোজন করতে হবে।

তো আমি গেলাম ওই ডাক্তারের কাছে। গিয়ে বললাম, চিকিৎসা করেছেন মর্মে সনদপত্র লাগবে। শুনে তিনি বিনা বাক্যব্যয়ে তাঁর ছাপানো প্যাডে লিখে সনদপত্রখানা আমার হাতে দিয়ে বললেন, 'পাঁচশো টাকা দিন'। সত্যি বলতে কি, তিনি টাকা চাওয়ায় আমি অবাকই হলাম। কারণ, আমার চিকিৎসাটা তিনিই করেছিলেন। তাই ডাক্তারি/চিকিৎসা সনদপত্রের জন্য টাকা দিতে হবে, তা ছিল আমার ধারণার বাইরে। আমি তাঁকে সেটাই বললাম, কিন্তু তাঁর যুক্তি, সনদপত্রের জন্য আলাদা টাকা দিতেই হবে। শেষমেষ সাড়ে তিনশো কি চারশো টাকায় রফা হল।

ওই সনদপত্র দাখিল করার পরই আমার এমএল মঞ্জুর করেছিলেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর পর গত বারো বছরে আমার অনেক সহকর্মী (ডাক্তার কর্তৃক প্রদত্ত) চিকিৎসা সনদপত্র ছাড়াই প্রয়োজনে/অপ্রয়োজনে এমএল নিয়েছেন, আবেদনপত্রের সঙ্গে কেবল ব্যবস্থাপত্র সংযুক্ত করে। আমি তখন এ ব্যাপারে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের শিক্ষক প্রতিনিধিদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, তাঁরা জবাবে জানালেন যে, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাইলে দিতে পারেন, মানে প্রয়োজনীয় ডাক্তারি/চিকিৎসা সনদপত্র ছাড়াই আবেদনকারীর এমএল মঞ্জুর করতে পারেন।

এ ঘটনায় তখনই আমার মনে দুটো প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছিল এবং পরবর্তীকালে এ ব্যাপারে অনেকের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে আলাপ করেছি, কিন্তু আমার প্রশ্নের কোনো সদুত্তর পাইনি অদ্যাবধি।

প্রশ্ন দুটো হল:
  1. যে ডাক্তার রোগীর চিকিৎসা করেছেন, ওই রোগীকে প্রয়োজনে চিকিৎসা সনদপত্র দেওয়া সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে কি না? আর পড়লে সেটার জন্য তিনি আলাদা টাকা দাবি করতে পারেন কি না?
  2. যে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ বৈষম্যমূলক আচরণ করল শিক্ষকদের মধ্যে কাউকে সুযোগ দিয়ে আর কাউকে বঞ্চিত করে, সে ধরনের পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক গৃহীত যাবতীয় সিদ্ধান্ত শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের তথা সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য কল্যাণকর হতে পারে কি না?