সোমবার, আগস্ট ৩০, ২০১০

'উপজাতি না আদিবাসী ?'


পর্যুক্ত শিরোনামটি আমার দেওয়া না, সিকদা৭১ এর কাছ থেকে ধার নেওয়া। সিকদা৭১ এই শিরোনামে গত ২৫ আগস্ট একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর একজন সদস্য হিসাবে আমিও উক্ত পোস্টে একটি মন্তব্য করেছিলাম। আমার মন্তব্যের সূত্র ধরে পোস্টদাতা এবং পরে আমারসহ অন্যান্য ব্লগারের আরও যে-সব মন্তব্য এসেছে সেগুলো নীচে কপি-পেস্ট করে (বাঁকা হরফে) দিলাম:

মং হ্লা প্রু পিন্টু ২৫ আগস্ট ২০১০, ১৪:৫২
আপনার পোস্টটি পড়ে আমার ধারণা হল, আদিবাসী বলুন কিংবা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীই বলুন আপনি তাদের উপজাতি বানিয়েই ছাড়বেন। বাংলায় উপজাতি শব্দটা নিশ্চয়ই কোনো ইংরেজি শব্দ থেকে এসেছে, তাই না? এবার দয়া করে বলুন, কোন ইংরেজি শব্দ থেকে অবমাননাকর এই উপজাতি শব্দটা এসেছে। তার পর আমি আমার বক্তব্য উপস্থাপন করব।

সিকদা৭১ ২৫ আগস্ট ২০১০, ১৫:২৩

আপনি হয়ত না কিন্তু আপনাদের স্বজাতি যেভাবে বিদেশের মাটিতে বাংগালীদের তথা বাংলাদেশিদের আত্যাচারি বানিয়ে যে ভাবে প্রপাগান্ডা চালাছ্ছে তা কি মেনে নেওয়া যায়?এতে আমার মত কেউ যদি দেশ প্রেমের কারনে কিছু সত্য তথ্য যদি তুলে ধরে তা কি অন্যায়?

মং হ্লা প্রু পিন্টু ২৫ আগস্ট ২০১০, ১৬:০৭
আপনি কিন্তু আমার প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন।

আপনাদের স্বজাতি, এখানে আমার বা আমাদের স্বজাতি বলতে আপনি কাদের বুঝিয়েছেন ঠিক বোধগম্য হল না। ধরে নিচ্ছি, আপনি চাকমাদের বুঝিয়েছেন। আদিবাসী বা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে চাকমারাই রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা বেশি নিয়েছে কিংবা পেয়েছে। অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য বিদেশি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার শিক্ষাবৃত্তির বলতে গেলে ৯৯ শতাংশই চাকমাদের দখলে। আর এগুলোর বেশির ভাগ হয়েছে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে, যোগ্যতার মাপকাঠিতে হয়েছে খুব কম।
সে যা-ই হোক, উপজাতি কন্সেপ্ট বা ধারণা নিয়ে আমি আপনার সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছিলাম। এখানে বলে রাখা ভালো যে, আমি উপজাতি শব্দের ঘোর বিরোধী।

নিজাম কুতুবী ২৫ আগস্ট ২০১০, ১৯:১৩
উপজাতি না আদিবাসী ?
কোনটাই নয়
আমরা সবাই বাঙ্গালী

মং হ্লা প্রু পিন্টু ২৫ আগস্ট ২০১০, ১৯:৩৫

নিজাম ভাই, কিছু মনে করবেন না। এখানেও (আপনার ওই বাক্যের ব্যাপারে) আমার দ্বিমত আছে।
দ্বিমতের প্রধান কারণ, আমি বাংলা ভাষাভাষির লোক নই অর্থাৎ আমার মাতৃভাষা বাংলা নয়।

পলাশমিঞা ২৫ আগস্ট ২০১০, ২০:১০
অনেক কিছু আজ জানলাম।

সাইদুর রহমান চৌধুরী ২৬ আগস্ট ২০১০, ০২:৩৩

যে বা যারাই এই 'উপজাতি' শব্দটির প্রচলন করেছেন তাঁরা এটা মাথায় আনেননি যে শব্দটি যাদের উদ্দেশ্যে ব্যবহুত হচ্ছে তাঁদের জন্য অসম্মানজনক, কারন 'উপ' দিয়ে কম, অধস্তন বা নিম্নমানের এরকম বোঝানো হয়। কাজেই উপজাতি বললে জাতির-উপ হয়ে যায়, সে হিসাবে ইংরেজি ট্রাইব এর বাংলা হিসাবে 'উপজাতি' যথাযথ শব্দ হয়নি, এটা ব্যবহার করাও অনুচিত মনে করি।
ট্রাইব-এর যে নৃতাত্ত্বিক সঙ্গা, তাতে আমাদের দেশের এই জাতিসত্ত্বাসমূহ ট্রাইবই, ইংরেজিতে ট্রাইব শব্দটি অসম্মানজনকও নয়, কিন্তু তার বাংলা 'উপজাতি' করলে তা অসম্মানজনক হয়ে যায়।

মং হ্লা প্রু পিন্টু ২৬ আগস্ট ২০১০, ১২:৩৪

সাইদ ভাই, আপনি ট্রাইব-এর সংজ্ঞা টানতে গিয়ে নৃতাত্ত্বিক প্রসঙ্গটি টেনেছেন, এবং টেনে আমাদের ( ক্ষুদ্র জাতিসত্তাসমূহ) ট্রাইব অভিধায় আখ্যায়িত করেছেন। আমার মতে, এ ব্যাপারেও বিস্তর আলোচনার অবকাশ রয়েছে।
স্থান-কাল ভেদে ট্রাইবরা কখনো জাতিতে (নেশন) উন্নীত হয় কি না? কিংবা জাতি কখনো ট্রাইব-এ পরিণত হয় কি না?
আপনি তো এখন বিদেশে আছেন। ইংল্যান্ডের পূর্ব লন্ডনে তো অনেক বাঙালি (বাংলা ভাষাভাষি) স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। তারা সেখানে কেবল বাঙালি, না বাংলাদেশি বাঙালি / ভারতীয় বাঙালি, না কি বাঙালি ট্রাইব (উপজাতি) নামে পরিচিত?
প্রশ্নটা অন্যভাবেও করা যায়, ভারতে তো একাধিক ট্রাইবাল (ক্ষুদ্র জাতিসত্তা অধ্যুষিত) প্রদেশ এখনও বিদ্যমান। যেমন: মণিপুর, ত্রিপুরা, মিজোরাম প্রভৃতি। অদূর ভবিষ্যতে এ সমস্ত প্রদেশ থেকে প্র অব্যয়টি খসে গেলে এরা কি জাতিতে (নেশন) উন্নীত হয়ে যাবে?
এই ভূখণ্ডে বাঙালিরা শাসকশ্রেণী তো, তাই নিজের (সংকীর্ণ) অবস্থান থেকেই তারা সবকিছুকে দেখে এবং সংজ্ঞায়িত করে।
সাইদ ভাই, এ প্রসঙ্গে আমি আপনার further বক্তব্য প্রত্যাশা করছি।

আমার প্রত্যাশা ছিল, প্রিয় ব্লগার সাইদুর রহমান চৌধুরী (এবং আগ্রহী অন্য ব্লগাররাও) আলোচনাটি চালিয়ে যাবেন যাতে যুক্তি-পাল্টা যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে মোটামুটি একটা উপসংহারে পৌঁছানো যায়। কিন্তু আলোচনাটি আর এগয়নি। হয়তো তিন-চার দিনের পুরনো পোস্ট বলে আমার শেষ মন্তব্যটি সবার, বিশেষ করে সাইদ ভাইয়ের দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। তাই, সবার অংশগ্রহণের প্রত্যাশায় প্রাসঙ্গিক মন্তব্যগুলো কপি-পেস্টের মাধ্যমে নতুন পোস্ট আকারে উপস্থাপন করা। জানি না, আমার এই নতুন পোস্ট দেওয়ার ব্যাপারটাকে ব্লগাররা বাড়াবাড়ি বলে মনে করবেন কি না।

শুক্রবার, আগস্ট ১৩, ২০১০

'কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থানসমূহ' এর 'মাথিনের কূপ, টেকনাফ' প্রসঙ্গে

দৈনিক রূপসীগ্রাম এর সূচনা সংখ্যার চাররঙা সাপ্লিমেন্টারি টেবলয়েডের লেখাগুলোয় চোখ বুলাচ্ছিলাম। এক জায়গায় (১৫-১৬ পৃষ্ঠায়) মং বা অঙের লেখা (উল্লিখিত শিরোনামের) দেখে আগ্রহ নিয়ে পড়ছিলাম। কিন্তু লেখাটির এক জায়গায় (মাথিনের কূপ, টেকনাফ উপ-শিরোনামের অংশে) এসে আমার মনে খটকা লাগল। সে অংশটুকু আমি এখানে হুবহু উদ্ধৃতি দিচ্ছি, ...চতুর্দশ বয়সী জমিদার কন্যা মাথিন ও ধীরাজ ভট্টাচার্যের নিখাদ প্রেমের ঐতিহাসিক নিদর্শন এ মাথিনের কূপ। গোত্র আভিজাত্যের প্রতিবন্ধকতায় ধীরাজ জমিদার মগ কন্যাকে বিয়ে করতে ব্যর্থ হন। সুমধুর প্রেমের করুণ বিচ্ছেদে প্রেম সম্রাজ্ঞী তিলে তিলে মৃত্যু বরণ করেন। এতে শাশ্বত অকৃত্রিম প্রেমের এক ইতিহাস বিরচিত হয়। মাথিনের অতৃপ্ত প্রেমের অমোঘ সাক্ষী মাথিনের কূপ।
লেখক মং বা অং তাঁর ঙারো রাখাইন গ্রন্থে মাথিনের কূপ প্রসঙ্গে ঠিক উল্টো কথাই লিখেছিলেন। আমি এখানে মং বা অঙের গ্রন্থ থেকে দুটো অংশ হুবহু উদ্ধৃতি দিচ্ছি, ...১৯৮৪ সালের আগ পর্যন্ত টেকনাফের অন্যান্য পাতকূয়ার মতই এটি একটি সাধারণ পাতকূয়া ছিল মাত্র। টেকনাফের তরুণ সাংবাদিক আবদুল কুদ্দুস রানা ধীরাজ ভট্টাচার্যের ‘যখন পুলিশ ছিলাম’ উপন্যাসে বর্ণিত কাহিনীর আলোকে ‘দুটি জীবনের মিলন ও বিচ্ছেদের সাক্ষী’ শিরোনামে ধীরাজ-মাথিনের প্রেম কাহিনী, অসম ও অতৃপ্তি প্রেমের নীরব সাক্ষী হিসেবে কূপটিকে বর্ণনা করে কূপের পাশে একটা সাইনবোর্ড টাংগিয়ে দেন। (পৃষ্ঠা ১৪৫)
...লাইলী-মজনু, রোমিও-জুলিয়েট এর সত্য প্রেম কাহিনী নিয়ে নাটক, সিনেমা আছে, থাকবে এতে কারো দ্বিমত নেই। ধীরাজ-মাথিনের প্রেম কাহিনী যেখানে সত্যাসত্য নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন সে কাহিনী নিয়ে টেলিফিল্ম নির্মাণ হওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত হয়েছে তা সাধারণ পাঠক মাত্রই অনুধাবন করতে পারবেন। (পৃষ্ঠা ১৪৮)
এ ব্যাপারে মং বা অঙের সঙ্গে মুঠোফোনে আমি কথা বলেছি। তিনি জানালেন, মাথিনের কূপ নিয়ে তিনি যা লিখেছেন তা ছাপা হয়নি, ছাপা হয়েছে কেবল ধীরাজ ভট্টাচার্যের কল্পকাহিনী।
এখন আমার প্রশ্ন, সম্পাদক কি একজন লেখকের বক্তব্যকে নিজের মতো উপস্থাপন করতে পারেন?

মং হ্লা প্রু পিন্টু
রামু, কক্সবাজার
maung.pintu@gmail.com

বৃহস্পতিবার, আগস্ট ০৫, ২০১০

মহেশখালিতে ১০টি বধ্যভূমির সন্ধান

ক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালিতে স্বাধীনতার দীর্ঘ ৩৯ বছর পর এই প্রথম বারের মতো নির্বাচিত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সদস্যদের সার্বিক সহযোগিতায় ১০টি বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব বধ্যভূমিতে চিরশায়িত আছেন '৭১ সালে রাজাকার-আলবদরের সহায়তায় পাক হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে খুন হওয়া ৮৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে মহেশখালিতে বধ্যভূমির শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া শুরুই করা যায়নি। তৎকালীন শাসক দলীয় লোকজনের পরামর্শে স্থানীয় প্রশাসন মহেশখালিতে মুক্তিযোদ্ধার কোনো বধ্যভূমির অস্তিত্ব নেই বলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর রিপোর্ট দিয়েছিল। অথচ সেই মহেশখালিতে একে-একে বেরিয়ে এসেছে ১০টি বধ্যভূমি এবং সেখানে চিরশায়িত মুক্তিকামী ৮৮ জন বীর শহিদের তালিকা, যেগুলো এতোদিন শনাক্তকরণের অভাবে অবহেলায় পড়ে ছিল। অবশেষে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে গত ২৬ জুলাই কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক গিয়াস উদ্দিন ও মহেশখালির উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম কাউসার হোসেন এর উদ্যোগে শুরু হয় শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের বধ্যভূমি আবিষ্কার, সংরক্ষণ ও শহিদদের তালিকা তৈরির কাজ। এ লক্ষ্যে সহকারী কমিশনার (ভূমি)-কে আহ্বায়ক করে একটি বধ্যভূমি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। উক্ত টিম ২৬ জুলাই থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় গিয়ে অনুসন্ধান করে মোট ১০টি বধ্যভূমি আবিষ্কার করে। অনুসন্ধানে উঠে আসা ৮৮ জন শহিদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ১৩ জন মুসলমান, ৩ জন রাখাইন (একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুসহ) এবং অবশিষ্ট ৬২ জন সনাতন ধর্মাবলম্বী অর্থাৎ হিন্দু।

বিস্তারিত এখানে ~