কক্সবাজারের 'কানা রাজার গুহা' দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে অন্যতম দর্শনীয় স্থান হতে পারে। জনশ্রুতি আছে যে, গুহাটি প্রায় তিনশো বছরের পুরনো। তবে গুহাটির নেই কোনো সংস্কার বা রক্ষণাবেক্ষণ। অবৈধ পাথর ব্যবসায়ীরা গুহার মুখ ও আশপাশের পাথরগুলো উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছে। এতে করে পাহাড় ভেঙে গুহার মুখ অনেকখানি ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে ঐতিহাসিক এ গুহাটি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। গুহাটির মুখ প্রায় একশো বর্গফুট এবং গুহার দৈর্ঘ্য প্রায় তিন কিলোমিটার। এ গুহা কীভাবে এবং কেনই-বা তৈরি করা হয়েছিল সে সব কাহিনী অজানাই রয়ে গেছে। ইনানী সমুদ্র সৈকত দর্শনে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকরা হাতে সময় থাকলে রহস্যঘেরা এ গুহাটিও এক নজর দেখে যান।
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার উপকূলীয় ইউনিয়ন জালিয়াপালং। এই ইউনিয়নের ইনানী থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দক্ষিণে সাগরের কূলঘেষা পাটুয়ার টেকের সুউচ্চ পাহাড়ের পাদদেশে 'কানা রাজার গুহা'র অবস্থান। কক্সবাজারের লাবণী সী-বীচ থেকে এর দূরত্ব পঁচিশ কিলোমিটার। গুহাটির একেবারে কাছে যাওয়ার তেমন কোনো সুযোগ নেই। অনেক কষ্ট করে গুহাটির কাছে গেলে শোনা যায় বানর আর পাখির কিচিরমিচির শব্দ। এ সময় গা শিউরে ওঠে।
জেলে ও স্থানীয়দের মুখ থেকে 'কানা রাজার গুহা' নিয়ে অনেক কথা শোনা যায়। কানা রাজার আসল পরিচয় কী তা উদ্ধার করা সম্ভব না হলেও এলাকায় জনশ্রুতি আছে যে, তিনি ছিলেন একজন আধ্যাত্মিক শাসক। কিংবদন্তি আছে, প্রায় তিনশো বছর পূর্বে কানা রাজা তাঁর দলবলসহ আরাকান (বর্তমান মিয়ানমার) থেকে পালিয়ে এসে পাটুয়ার টেকের পাহাড়ে অবস্থান নেন। সেখানে তিনি একটি গুহা খনন করান। পরবর্তীতে এটি 'কানা রাজার গুহা' নামে পরিচিতি লাভ করে।
তিনশো বছর পূর্বে এখানকার একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল সমুদ্র পথ। সেই সময় বঙ্গোপসাগরে দেশি-বিদেশি মালবাহী জাহাজ ও বিভিন্ন জলযান চলাচল করত। এ সব জলযান থেকে কর আদায় করতেন কানা রাজা। অনেকে তাঁকে সমীহ করে দিয়ে যেত মূল্যবান সামগ্রী। এ সব মালামাল গুহায় এনে রাখা হত। তাই অনেকের ধারণা, এ গুহায় এখনও অনেক মূল্যবান সামগ্রী রয়েছে।
প্রায় একশো বছর পূর্বে স্থানীয় চাক সম্প্রদায়ের লোকজন পাহাড়ে জুম চাষ করার সময় এ গুহার সন্ধান পায়। পরবর্তীতে রহস্যঘেরা এ গুহা এক নজর দেখার জন্য আসতে থাকে হাজার হাজার মানুষ। প্রত্যক্ষদর্শী অনেকের মতে, 'কানা রাজার গুহা'টি সম্ভবত দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ গুহা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন