রবিবার, ডিসেম্বর ২৭, ২০০৯

পিসি ট্রাবলশ্যুটিং

কেসিং খোলার পদ্ধতি

যারা কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা রাখেন না তাদের জন্য এই পর্বটি। এখানে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারগুলোর সাথে এবং জানাব কিভাবে কেসিং খুলতে হয় তা।
* সাধারণত কেসিং-এর পেছনে এটি খোলার ২+২=৪টি স্ক্রু থাকে। কেসিং খোলার আগের পাওয়ার সাপ্লাই অফ করুন। মাদারবোর্ডের পেছন থেকে সব প্লাগ খুলে ফেলুন।
* সাধারণত সামনে থেকে কেসিংটাকে দেখলে এর বামপাশের অংশটি খুলতে হয়। এর পেছনে স্ক্রু দুটি খুলতে ভালো চারকোণা স্ক্রু ড্রাইভার লাগবে আপনার। খোলা স্ক্রু সযত্নে রাখুন।
* স্ক্রু খোলা হয়ে গেলে কেসিং-এর পাশ থেকে কভারটি আলাদা করে নিন। সাধারণত কভারটি পেছনদিকে কিছুটা স্লাইড করে খুলতে হয়।
Motherboard পিসি ট্রাবলশ্যুটিং পর্ব ১:কেসিং খোলার হাতেখড়ি | Techtunes
* কেসিং খুলেছেন ? ভেতরে তাকান। মূল যে বড় সার্কিট বোর্ডটি দেখছেন তাই মাদারবোর্ড। আর পাওয়ার সাপ্লাই থাকে কেসিং এর উপরে পেছন দিকে। পাওয়ার সাপ্লাই থেকে অনেকগুলো লাল, হলুদ, কালো বা নীল তার বের হয়ে আসে। এর কিছু সংযুক্ত মাদারবোর্ডে কিছু বা সরাসরি অন্য হার্ডওয়্যারে যেমন- সিডি ড্রাইভ, ফ্লপি ড্রাইভ, হার্ডডিস্ক।
* মাদারবোর্ডে প্রসেসর কোনটি তা বুঝতে এর কুলিং ফ্যান খুঁজে বের করুন। সাধারণত এটি মাদারবোর্ডের উপরে কিছুটা বামে থাকে। প্রসেসর ফ্যানের জন্য সরাসরি দেখা সম্ভব নয়।
* র‌্যাম সাধারণ প্রসেসরের ডানপাশে থাকে। মডেলভেদে ২-৪টি স্লট, লম্বাকৃতির।
* সাউন্ডকার্ড কোনটি বুঝতে হলে খুঁজে বের করুন স্পিকারের ইনপুট জ্যাক কোথায় লাগে সেই ডিভাইসটি।
* একইভাবে মনিটরের ক্যাবল দিয়ে জানতে পারবেন কোনটি আপনার গ্রাফিক্স কার্ড।
* একই উপায়ে মডেম (টেলিফোনের তার), ল্যান কার্ড (ব্রন্ডব্যান্ড ইন্টারনেটের তার) খুঁজে বের করতে পারবেন আপনি।
* চিকন চিকন লাল, হলুদ, কাল বা নীল তারগুলো পাওয়ার ক্যাবল। সাদা বা লাল চওড়া ক্যাবলগুলো ডাটা ক্যাবল।
* সাধারণ একটি পিসিতে কেসিং-এর পেছনে পাওয়ার কর্ড, মনিটর কর্ড, মাউস ও কী-বোর্ড, স্পিকার ইনপুট এগুলো প্রাথমিক অনুসঙ্গ যা সব পিসিতেই আছে।
* বিভিন্ন ক্যাবল আলাদা রকমের হওয়াতে সবচেয়ে বড় সুবিধা এক ধরনের কানেকশন আপনি ভুল করে চাইলেও অন্যটিতে লাগাতে পারবেন না।
78 পিসি ট্রাবলশ্যুটিং পর্ব ১:কেসিং খোলার হাতেখড়ি | Techtunes

কম্পিউটার ঠিকমতো চালু না হলে
এটিকে একটি পরিচিত সমস্যা হিসেবেই চিহ্নিত করতে চাই। নিয়মিত কম্পিউটার চালু হয় না এমনটা বললে মনে হয় ভুল বলা হবে না। নতুন ব্যবহারকারীদের কাছে এই সমস্যার একটাই সমাধান। তা হচ্ছে বিক্রেতার শরণাপন্ন হয়ে অযথা পয়সা খরচ। দেখি তো আপনাকে বাঁচাতে পারি কিনা। নিচের কথাগুলো শুনুন মনোযোগ দিয়ে।
** পাওয়ার সুইচ অন করার পর সিস্টেমের ইন্টারনাল স্পিকার কয়টা আওয়াজ করলো খেয়াল করুন। যদি বীপ সংখ্যা এক হয় তার মানে কম্পিউটার ডিসপ্লে আউটপুট পাচ্ছে না।অথবা কীবোর্ড মাদারবোর্ডের সাথে ঠিক্মতো সংযুক্ত না হলেও এমনটা হতে পারে।
যদি একটি বড় বীপের পর দুটি ছোটো বীপ হয় তারমানে র‌্যাম পাচ্ছে না আপনার মাদারবোর্ড।র‌্যাম পরিবর্তন না স্লট পরিবর্তন করে দেখুন।
যদি একটি বড় বীপের পর তিনটি ছোট বীপ হয় তাহলে বুঝবেন নিশ্চিতভাবেই ডিসপ্লে বা গ্রাফিক্স আউটপুটের সমস্যা।
আর যদি একটা বড় বীপ তারপর চারটা ছোট বীপ হয় তারমানে আপনার মাদারবোর্ড বা গুরুত্বপূর্ণ কোন হার্ডওয়ার নষ্ট হয়ে গিয়েছে বা ঠিকমতো কাজ করছে না। তবে এর জন্য আপনার পিসিতে ইন্টারনাল স্পীকার কিন্তু থাকতে হবে। অনেক মাদারবোর্ডে ইন্টারনাল স্পীকার বিল্ট-ইন থাকে।অন্যগুলাতে আলাদা লাগাবে হয়।সাধারনত কম্পিউটার কেনার সময় বিক্রেতাই এটি দিয়ে দেয় তবে অনেকসময় ভুলে তা ঠিকমতো লাগানো নাও থাকতে পারে।সেক্ষেত্রে আপনার মাদারবোর্ডের বক্সে দেখুন স্পীকার পান কিনা।নইলে সময় করে বিক্রেতার কাছ থেকে নিয়ে আসুন।বুঝতেই পারছেন কেন আমি এটাকে এতো গুরুত্ব দিচ্ছি।
** মনিটরের দিকে তাকান। এটি কি স্লীপ মোডে আছে ? অর্থাৎ এর লেড লাইট কি জ্বলছে নিভছে কিনা খেয়াল করুন। যদি তা না হয় অর্থাৎ লেড লাইট জ্বলেই থাকে এবং মনিটরে কিছু না কিছু দেখা যায় তাহলে আপনাকে অভিনন্দন। আপনার মাদারবোর্ড ও গ্রাফিক্স কার্ড ঠিক আছে।সমস্যাটা ছোটোখাটো।নো টেনশন!
** যদি পাওয়ার অন করাই সম্ভব না হয় তাহলে কেসিং খুলে দেখুন নিঃসন্দেহে আপনার পাওয়ার সাপ্লাইয়ে সমস্যা। খোঁজার চেষ্টা করুন সমস্যাটা কোথায়।
** এবারে ধরুন মাদারবোর্ডের পাওয়ার লেড জ্বলছে কিন্তু কেসিংয়ের পাওয়ার বাটন চাপলেও পিসি রেসপন্স করছে না তখন বুঝতে হবে কেসিংয়ের পাওয়ার সাপ্লাইয়ে কোনো সমস্যা হবার কারণে এটি পর্যাপ্ত ভোল্টেজ আউটপুট দিতে পারছে না। এক্ষেত্রে সম্ভব হলে অন্য পাওয়ার সাপ্লাই লাগিয়ে চেষ্টা করে দেখুন।
** এবারেও কাজ হয়নি ? হতে পারে আপনার পাওয়ার সুইচেই সমস্যা। অভিজ্ঞ কাজ জানা ব্যবহারকারীরা সম্ভব হলে মাদারবোর্ডের ম্যানুয়াল দেখে মাদারবোর্ডের পাওয়ার বাটন পিন দুইটি বের করে তা কোনোভাবে কন্টাক্ট করে দেখতে পারেন কাজ হয় কিনা। তবে অনভিজ্ঞরা এই কাজটি না করতে যাওয়াটাই ভালো।
** পাওয়ার সংক্রান্ত সমস্যার আশাকরি সমাধান হলো। এবারও কম্পিউটার চালু হচ্ছে না ? তাহলে বুঝতে হবে র‌্যামের সমস্যা। র‌্যামের স্লট পরিবর্তন করে নতুবা অন্য র‌্যাম লাগিয়ে দেখুন।
** কম্পিউটার বুট হলো ঠিকঠাক কিন্তু উইন্ডোজ লোডিং-এর আগেই আটকে গেছে ? তখন বুঝতে হবে আপনার হার্ডডিস্কের সমস্যা। হার্ডডিস্কের পাওয়ার ও ডাটা ক্যাবলের কানেকশন চেক করুন। সম্ভব হবে মাদারবোর্ডের যে কানেক্টরে ক্যাবলটি লাগানো তা পরিবর্তন করে দেখুন। এছাড়া এমনটি কি হচ্ছে কম্পিউটার ঠিকমতো চালু হচ্ছে হয়তো অপারেটিং সিস্টেমও লোড হচ্ছে তারপর ধুড়ুম করে পিসি বন্ধ হয়ে রিস্টার্ট করছে। এটি সম্ভবত প্রসেসরের কুলিং ফ্যান বা হিটসিংক ও প্রসেসরের কানেকশনের দুর্বলতার কারণে হচ্ছে। চেক করে দেখুন ফ্যান ঠিকমতো ঘুরছে কি-না বা ফ্যানসহ সবকিছু ঠিকমতো টাইট আছে কিনা। পারলে কুলিং ফ্যানসহ হিটসিংক খুলে আবারও লাগান।
আর ধুড়ুম করে বন্ধ না হলে মানে একটু সময় নিয়ে সংকেত দিয়ে বন্ধ হওয়া মানে ভাইরাসের আক্রমণের শিকার আপনি।
#ধুড়ুম বলতে আমি এটা বুঝাচ্ছি যে কম্পিউটার চলার সময় পাওয়ার চলে গেলে যেভাবে বন্ধ হয় সেরকম ঘটনা।
** এছাড়াও কোনো না কোনো ক্যাবল লুজ/ নষ্ট হয়ে যাবার কারণেও কম্পিউটার চালু হওয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এই ব্যাপারটিও খেয়াল রাখবেন।
প্রধান এই সমস্যাগুলোর কারণেই কম্পিউটার চালু হয় না। তবে বুঝতেই পারছেন এই অংশে শুধুমাত্র হার্ডওয়্যারজনিত সমস্যার কথাই বললাম, অপারেটিং সিস্টেম কিন্তু এখনও চালুই হতে দেইনি!

হার্ডঅয়্যার ট্রাবলশ্যুটিং
কম্পিউটারের ট্রাবলশুটিংয়ের প্রসঙ্গ আসলেই চলে আসবে হার্ডওয়্যারজনিত বিভিন্ন সমস্যার কথা। এত এত হার্ডওয়্যার পিসির ভেতর কোন না কোনোটিতে সমস্যা হওয়াটি নিত্যনৈমত্তিক একটা ঘটনা। তাই এর ব্যবহারকারী সবারই হার্ডওয়্যারগত বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করার সাধারণ কিছু উপায় জানা উচিত। আসুন ধাপে ধাপে জেনে নিই এমন কিছু সমস্যা ও তার সমাধান।

মনিটর
** যদি মনিটরে কোনো ডিসপ্লে না আসে এবং এর লেড লাইট জ্বলে নিভে তখন বুঝতে হবে ভিডিও কার্ডে কোনো সমস্যা বা মনিটরের ক্যাবল কানেকশন লুজ হয়ে গেছে। কানেকশন চেক করুন।
** যদি মনিটর ও পিসির পাওয়ার সুইচ অন করার পর তিনটি শর্ট বীপ শুনতে পান তাহলে বুঝতে হবে গ্রাফিক্স কার্ডে সমস্যা। আপনার গ্রাফিক্স কার্ডটি খুলে অন্য পিসিতে লাগিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিন এটি ঠিক আছে কিনা। আর যদি বিল্টইন গ্রাফিক্স হয় তাহলে আলাদা গ্রাফিক্স কার্ড এজিপি স্লটে লাগিয়ে টেস্ট করতে পারেন।ইন্টিগ্রেটেড এজিপির সমস্যা সমাধানে বায়োস সেটিংস রিসেট করে দেখতে পারেন।
** যদি মনিটর ঝাপসা মনে হয় বা এটি কাঁপতে থাকে তাহলে বুঝতে হবে মনিটর ও গ্রাফিক্স কার্ডের রিফ্রেশ রেটে অসামঞ্জস্য আছে। যদি উইন্ডোজ লোড হওয়াকালীন এই সমস্যা হয় তাহলে বুঝবেন মনিটরের রিফ্রেশ রেট ভুলভাবে সেটিংস করা হয়েছে। এমতাবস্থায় সিস্টেম বুট হবার পর যখন Starting Windows মেসেজটি দেখবেন তখনই কী-বোর্ডের এফ৮ চেপে সেফ মোডে উইন্ডোজ চালু করুন। এর গ্রাফিক্স/ডিসপ্লে প্রোপার্টিজে গিয়ে রিফ্রেশ রেট ঠিক করুন।
** যদি মনিটরে অস্পষ্ট কালার ও প্যাটার্ন দেখা যায় এবং চালু করতে গেলে মনিটর কাঁপতে থাকে বা চালুই হয় না তখন বুঝতে হবে একহয় আপনার ডাইরেক্ট এক্স পুরাতন অথবা গ্রাফিক্স কার্ডের লেটেস্ট ড্রাইভার নেই। তাই সবসময় লেটেস্ট ডাইরেক্ট এক্স ব্যবহার করবেন ও গ্রাফিক্স কার্ড ড্রাইভার আপডেটেড রাখবেন। এরপর সমস্যা থাকলে বুঝতে হবে আপনার ভিডিও কার্ড ও উইন্ডোজের মধ্যে কম্পাটিবিলিটিতে সমস্যা আছে। এমতাবস্থায় অভিজ্ঞ কাউকে দেখান অথবা বিক্রেতার সাথে যোগাযোগ করুন।

সিডি/ডিভিডি রম
** যদি ড্রাইভে সিডি/ডিভিডি ঢুকালে তা  দেখা না যায় অথবা সেটি রান না করে তখন বুঝতে হবে সিডি/ডিভিডিতে স্ক্র্যাচ পড়েছে অথবা আপনার ড্রাইভের হেডে ধুলা জমে সেটি অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় পারলে সিডি ড্রাইভ খুলে সেটির হেড থেকে ধুলা পরিষ্কার করুন অথবা সিডি ক্লিনার কিনে তা প্রবেশ করিয়ে ড্রাইভের হেড ক্লিন করুন।
** সিডি যদি ড্রাইভের Eject বাটন চাপার পরও বের না হয় তখন বুঝতে হবে সিডিটি এখনও রান করছে। তাই অপেক্ষা করুন। তবে নিয়মিত এই সমস্যাটি হলে বুঝতে হবে সিডি ড্রাইভের মেকানিজমে সমস্যা। বিক্রেতার সাথে যোগাযোগ করুন।
**  যদি মাই কম্পিউটারেই সিডি ড্রাইভ খুঁজে পাওয়া না যায় তখন দেখুন এর পেছনের ডাটা ক্যাবল ও পাওয়ার ক্যাবল লুজ হয়ে গিয়েছে কিনা। তারপরও কাজ না হলে বায়োসে ঢুকে দেখতে পারেন আসলেই মাদারবোর্ড ড্রাইভটিকে ডিটেক্ট করতে পারছে কি-না। এখানে বুট ডিভাইস লিস্টে ড্রাইভটি দেখা গেলে বুঝা যাবে যে উইন্ডোজের সমস্যা। সেক্ষেত্রে ডিভাইস ম্যানেজারে গিয়ে ড্রাইভের ড্রাইভারটি আনইন্সটল করুন। ড্রাইভের ডাটা ক্যাবল খুলে আবার লাগান। উইন্ডোজ এবার নতুন করে ড্রাইভার ইন্সটল করবে।
**  অনেকেই হয়তো জানেন না ময়লা সিডি ক্লিন করতে ইচ্ছে করলে আপনি সেটিকে হালকা সাবানা পানি দিয়ে ধুলে পরিষ্কর করে ভালোমতো শুকিয়ে তারপর ব্যবহার করতে পারেন।  তবে ডিটারজেন্ট ব্যবহার করবেন না।

র‌্যাম
র‌্যামের ট্রাবলশুটিং বলতে বুঝায় যদি কখনও বিনা কারণেই পিসি হ্যাং করে বা রিস্টার্ট হয় তখন খেয়াল করবেন র‌্যাম স্লটে ঠিকমতো বসানো আছে কিনা। এরপর যদি একাধিক র‌্যাম ব্যবহার করে থাকেন তাহলে খেয়াল করুন সবগুলোই একই বাসস্পিডবিশিষ্ট কিনা। সিস্টেম স্ট্যাবিলিটির জন্য একই বাসস্পিডবিশিষ্ট র‌্যাম ব্যবহার করা খুবই জরুরি।

সাউন্ড
সাউন্ড নিঃসন্দেহে কম্পিউটারের অপরিহার্য একটি অংশ। কিন্তু একে নিয়ে বিড়ম্বনাও কম না। বন্ধুদেরকে নিয়ে আসলেন মুভি দেখাবেন বলে। কিন্তু পিসি অন করে মুভি প্লে করে দেখলেন ভিডিও আসছে কিন্তু সাউন্ড উধাও। অনেকেই মাঝেমধ্যে এরকম বিড়ম্বনাকর পরিস্থিতিতে পড়ে থাকেন। হঠাৎ হঠাৎ তো সাউন্ডের আইকনটাকেই খুঁজে পাওয়া যায় না। আসুন দেখে নিই কি করবেন তখন।
**  প্রথমেই যথারীতি দেখতে হবে সাউন্ড কার্ড ও স্পিকারের সব কানেকশন ঠিক আছে কিনা। মনে রাখবেন সাউন্ড কার্ডের মাঝের সবুজ পোর্টে স্পিকারের ইনপুট জ্যাকে ঢুকাতে হয়।
** সব ঠিক আছে ? তাহলে এবার দেখুন তো উইন্ডোজের নোটিফিকেশনগুলোর (ডিসপ্লের নিচে ডানকোণায় ঘড়ির পাশে) মধ্যে সাউন্ডের আইকনটি খুঁজে পাওয়া যায় কি। নেই ? নাকি লাল ক্রস? তাহলে বুঝতে হবে সাউন্ডের ড্রাইভার ইন্সটল করতে হবে। ড্রাইভার  ইন্সটল করে পিসি রিস্টার্ট দিন। ড্রাইভার না থাকলে উইন্ডোজ আপডেটের সহায়তা নিন।
** আইকন ঠিক আছে ? তাহলে দেখুন Mute অন করা কিনা। সাউন্ডের প্রোপ্রার্টিজে গিয়ে সাউন্ডের লেভেল চেক করুন।
** সব ঠিক ? ড্রাইভারও আছে ? তাহলে আগের ড্রাইভারটি আনইন্সটল করে আবার নতুন করে ড্রাইভার ইন্সটল করুন।
** আরেকটি ব্যাপার হতে পারে। সাউন্ড কার্ডের ড্রাইভার অন্য কোনো ড্রাইভারের সাথে কনফ্লিক্ট করতে পারে। এটি দেখার জন্য ডিভাইস ম্যানেজারে যান।
** সাউন্ড, ভিডিও এন্ড গেম কন্ট্রোলারস এক্সপান্ড করুন। যদি সাউন্ড কার্ডের পাশে হলুদ রংয়ের ‘!’ চিহ্ন দেখেন তাহলে বুঝতে হবে অন্য কোনো ডিভাইস সাউন্ড কার্ডের সাথে কনফ্লিক্ট করছে।
** এর সমাধান করতে ডিভাইস ম্যানেজার ট্যাব হতে প্রোপার্টিজ>রিসোর্সে যান। কনফ্লিক্টিং ডিভাইস লিস্ট হতে দায়ী ডিভাইসটি খুঁজে বের করুন। অটোমেটিক সেটিংস চেকবক্সে ক্লিক করে পিসি রিস্টার্ট করুন।
** এতেও কাজ হয়নি ? উপরের কাজটি আবার করে অটোমেটিক সেটিংস চেকবক্সটি ডিজেবল করে চেঞ্জ সেটিংস-এ ক্লিক করুন। অতঃপর বিভিন্ন সেটিংস-এর মাঝে দেখুন কখন কোন ডিভাইস কনফ্লিক করে, কখন করে না। কাজ শেষ হলে Ok করে পিসি আবার রিস্টার্ট দিন।
** স্পীকার যেই সাউন্ড কার্ডে লাগানো সেটাই ডিফল্ট সাউন্ড ডিভাইস হিসেবে চিহ্নিত করা আছে কিনা দেখুন।কেননা বর্তমানে এক্সটার্নাল গ্রাফিক্স কার্ডেও সাউন্ড কার্ড থাকে।

মাউস
সাধারণত রোলার বলবিশিষ্ট মাউসগুলোর ভেতর ময়লা ও ধুলাবালি জমে প্রায়ই সমস্যা তৈরি করে। এজন্য উচিত নিয়মিত মাউস পরিষ্কার করা। প্রথমে মাউসটি হাতে নিয়ে উল্টো করে নিচের অংশ গোলাকৃতি চাকতিটি হাতের আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরে বামদিকে ঘুরিয়ে ফেলুন। ভেতরের রোলার বলটি বের করুন। এবার মাউস হোলের ভেতরে তাকান। সেখানে বেশ কিছু রোলার দেখতে পাবেন। ময়লা-ধুলাবালি সেখানেই জমে। চিমটা বা হাতের নখ দিয়ে ময়লাগুলো আলগা করে মাউস উল্টে বাইরে ফেলে দিন। এবার মাউসের বলটি পরিষ্কার কাপড় বা টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলুন। সব কাজ শেষ হলে বলটি ভেতরে রেখে চাকতিটি নিয়ে বিপরীত দিকে ঘুরিয়ে বন্ধ করুন।
প্রাচীন কালের টিপস হয়ে গেল বলে দুঃখিত।কি করব বলুন।অপটিক্যাল মাউস নিয়ে বলার কিছু নেই।কেননা বেসিক ইলেকট্রনিক সার্কিট,সোল্ডারিং,মাল্টিমিটার এর সাথে যাদের পরিচয় নেই তারা আসলে নতুন মাউস কেনা ছাড়া কিছুই করতে পারবেন না।আর যারা এগুলো ব্যবহার করতে পারেন তাদের কোন সমস্যা হলে আশা করি নিজেরাই পারবেন বুঝেশুনে কাজ করতে।নইলে আমি তো আছিই!

কী-বোর্ড
কী-বোর্ডে যে সমস্যাটি বেশি ঝামেলা ফেলে তা হচ্ছে কী-বোর্ডের যে বাটনে যেটি আসার কথা তা না এসে অন্যটি আসা। এ সমস্যার সমাধান করা জানা থাকলে খুবই সহজ। আসুন জেনে নেই-
** কন্ট্রোল প্যানেলে গিয়ে Regional and Language অপশনে যান।
** Keyboard and Language ট্যাব থেকে Change Keyboard-এ ক্লিক করুন।
** সেখান থেকে United States International সিলেক্ট করে Apply,Ok করুন।
** এছাড়াও ডিভাইস ম্যানেজারে গিয়ে দেখে আসতে পারেন কী-বোর্ড ঠিকমতো কাজ করছে কিনা। সব ঠিক থাকার পরও যদি সমস্যা থেকে যায় তাহলে বুঝতে হবে কী-বোর্ড পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে আপনি।

মডেম
প্রায় সময়ই দেখা যায় মডেমটি কাজ করছে না। এটি দিয়ে ইন্টারনেট কানেক্ট হতে পারছেন না আপনি অথবা পিসি মডেমই খুঁজে পাচ্ছে না। এই সমস্যা যেমন হার্ডওয়্যারজনিত হতে পারে তেমনি কমিউনিকেশন সফটওয়্যার বা সেটিংসজনিত কারণেও হতে পারে। নিচে এই জাতীয় বেশ কিছু ট্রাবলশুটিংয়ের কথা বলছি।
** যদি উইন্ডোজ মডেমই ডিটেক্ট করতে না পারে তখন মডেমটি খুলে অন্য স্লটে লাগিয়ে দেখুন।
** মডেম ওকে কিন্তু নেট কাজ করছে না ? তখন ডিভাইস ম্যানেজারে গিয়ে দেখুন মডেমটি ঠিকমতো কাজ করছে কিনা। প্রয়োজনবোধে ড্রাইভার রিইন্সটল করে দেখতে পারেন।
** কাজ হচ্ছে না ? ফোন লাইন চেক করুন। মডেম ঠিক মোডে আছে কিনা দেখুন। যদি আপনি ট্রান্সমিশন রিসিভ করতে চান তাহলে মডেম অ্যানসার মোডে আর ইন্টারনেট ব্যবহার করতে ডায়াল মোডে থাকা লাগবে।
** যদি মডেম ডায়াল করতে পারে কিন্তু কানেক্ট হয় না তখন দেখুন আপনার ডায়ালিং নাম্বার ঠিক আছে কিনা।
** যদি না ডায়ালটোন হয় তাহলে লাইন চেক করুন। ফোনের বাসায় অন্য এক্সটেনশন লাইন থাকলে সেটি পরীক্ষা করুন।
* কমিউনিকেশন সফটওয়্যার ঠিক আছে কিনা তা দেখুন। কন্ট্রোল প্যানেলে মডেম প্রোপার্টিজে wait for dial tone before dialing অপশনটি অফ করে দিলে সমস্যার সমাধান হতে পারে।
** COM পোর্ট সেটিংস ঠিক আছে কি-না দেখুন। মডেম প্রোপার্টিজ থেকে এটি দেখতে পারবেন। প্রয়োজনে COM Port পরিবর্তন করুন।

হার্ড ডিস্ক
অনেক সময় কম্পিউটার চালু হবার সময় হার্ডডিস্ক এরর দেখায়। এর কারণ হতে পারে-
** মাদারবোর্ড হার্ডডিস্ক পাচ্ছে না। প্রথমেই নিশ্চিত হোন হার্ডডিস্কের পাওয়ার ক্যাবল ঠিক আছে কি-না। তারপর হার্ডডিস্ক থেকে মাদারবোর্ডের ডাটা ক্যাবল চেক করুন।
** হার্ডডিস্কের পেছনের পিন ঠিক আছে কিনা দেখুন।
** হয়তোবা বায়োসের সেটিংসের কারণেও সমস্যা হতে পারে। বায়োসে গিয়ে দেখতে পারেন হার্ডডিস্ক পাওয়া যাচ্ছে কিনা।

উইন্ডোজ আপডেটিং বিড়ম্বনা
উইন্ডোজ এক্সপি, ভিসতায় এবং সেভেনে অটোমেটিক আপডেটিং একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার। এর মাধ্যমে উইন্ডোজ নিজে থেকে ইন্টারনেট থেকে আপনার অপারেটিং সিস্টেম, এ্যাপ্লিকেশন ও হার্ডওয়্যারের জন্য প্রয়োজনীয় আপডেট ডাউনলোড করে থাকে। পাশাপাশি সিকিউরিটি সিস্টেমও আপডেট হয় এভাবে। তবে অনেক সময় আপডেট আপনার পিসির স্ট্যাবিলিটি নষ্ট করে দিতে পারে। কিভাবে বুঝবেন ? যেমন আপডেট করে পিসি রিস্টার্ট করার পর এরর মেসেজ, পিসি স্লো হয়ে যাওয়া, হ্যাং করা ইত্যাদি। তখন প্রয়োজন পড়বে সাম্প্রতিক আপডেটটি ডিলিট করে ফেলার। এবার আসুন দেখে নিই আপডেট কিভাবে আনইন্সটল করবেন। সব ওএস-এ নিয়ম প্রায় একই। আমি ভিসতার পদ্ধতি অনুসরণ করছি।
** কন্ট্রোল প্যানেল থেকে প্রোগ্রামস এন্ড ফিচারস এ যান।
** বাম পাশের টাস্কস মেনু থেকে ভিউ ইন্সটলড আপডেটস-এ ক্লিক করন।
53 পিসি ট্রাবলশ্যুটিং পর্ব ৪: আপডেটিং বিড়ম্বনা | Techtunes
** এখানে যে সমস্ত আপডেট ডাউনলোড করেছেন তার লিস্ট থেকে প্রয়োজনীয় আপডেটটি সিলেক্ট করে রিমুভ করুন। কোন আপডেট কবে ইন্সটল করেছেন তা দেখে সহজেই লেটেস্ট আপডেট কোনটি তা বুঝতে পারবেন।
** অথবা কন্ট্রোল প্যানেল>উইন্ডোজ আপডেট-এ গিয়ে ভিউ আপডেট হিস্টরিতে যান। সেখান থেকে ইন্সটলড আপডেট-এ ক্লিক করেও কাজটি করতে পারে।

হার্ডঅয়্যার আপডেটিং বিড়ম্বনা
উইন্ডোজের আপডেটিং-এর মাধ্যমে অকেজো হার্ডওয়্যারের ড্রাইভার ডাউনলোড করে তা যেমন সচল করা যায় তেমনি উল্টোটাও হতে পারে। আপডেট করার পর দেখলেন যে ডিভাইসটি আর কাজ করছে না। কি করবেন তখন ? বলছি শুনুন।
** কম্পিউটারে রাইট ক্লিক করে প্রোপার্টিজ> ডিভাইস ম্যানেজারে যান। এক্সপিতে মাই কম্পিউটারে রাইট ক্লিক তারপর প্রোপার্টিজ>হার্ডওয়্যার> ডিভাইস ম্যানেজার।
** যে ডিভাইসটি সমস্যা করছে সেটিকে এক্সপান্ড করে রাইট ক্লিক করে প্রোপার্টিজ>ড্রাইভারে যান। ভাগ্য ভালো থাকলে ‘রোল ব্যাক ড্রাইভার’ অপশন দেখলে তা সিলেক্ট করলে কাজ হয়ে যাবে। ভাগ্যের কথা বলছি কেননা সব সময় এই অপশনটি পাবেন না।
54 পিসি ট্রাবলশ্যুটিং পর্ব ৪: আপডেটিং বিড়ম্বনা | Techtunes
** এতে কাজ না হলে একই ড্রাইভার ট্যাব থেকেই আনইনস্টল সিলেক্ট করে আবার নতুন করে আগের ড্রাইভার ইন্সটল করুন। কাজ হয়ে যাবে।
আর আমার পরামর্শ হচ্ছে যদি ডিভাইসটি ঠিকমতো কাজ করতে থাকে তাহলে একমাত্র গ্রাফিক্স কার্ড বাদে কোনোটাই ড্রাইভার আপডেট করা থেকে বিরত থাকবেন। অনাকাঙ্খিত ঝামেলা থেকে রেহাই পাবেন এতে।

অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল না হলে
খুব, খুব, খুবই বিরক্তিকর একটি সমস্যা এটি।এক্সপিতে বেশি দেখা যায় এই সমস্যা। সি ড্রাইভ ফরম্যাট দিয়ে এক্সপি ইন্সটল করতে বসেছেন কিন্তু সেটি সেটআপ হচ্ছে না। কেমনটা লাগে তখন বলুনতো? মাঝনদীতে দাঁড়বিহীন নৌকার মাঝির মতো মনে হয় তখন নিজেকে। কেননা কোনো অপারেটিং সিস্টেম বিহীন হার্ডডিস্ক যেমন চালাতে পারবেন না তেমনি এই মুহূর্তে সেই অপারেটিং সিস্টেম ব্যাটাই তো ইন্সটল হতে চাচ্ছে না। কি করতে পারেন তখন। আসুন একবার দেখে নিই।
**   যদি সিডি থেকে ফাইল কপি হতে গিয়েই আটকে যায় তাহলে বুঝতে হবে সিডি/ডিভিডি রম ড্রাইভ বা সিডিতেই সমস্যা। সিডিরমটি ক্লিন করে নিন অথবা অন্য ভালো সিডি দিয়ে চেষ্টা করুন।
**   যদি সিডি কপি হবার পর রিস্টার্ট এবং ইন্সটল হতে গিয়ে আটকে যায় তাহলে এটি সিডির ফাইল কপিতে সমস্যার কারণেও হতে পারে। আবার শুরু থেকে শুরু করুন। আবারও আটকেছে? তাহলে বুঝতে হবে হার্ডওয়্যারগত সমস্যা এটি সম্ভবত র‌্যামের। র‌্যামের স্লট পরিবর্তন করে দেখুন। একাধিক বাসস্পিডের র‌্যাম লাগানো থাকলে একই স্পিডবিশিষ্টটি রেখে বাকিগুলো খুলে ফেলুন। এক্ষেত্রে নতুন সেটআপ করার সময় সিডি থেকে বুট করে ফাইল কপি করতে হবে না। আপনাকে কিছুই করতে হবে না। শুধু বসে থেকে পিসিকে নিজের মতো চলতে দিন। আগেরবার কপি করা ফাইল দিয়েই কাজ চলবে।
**   এছাড়া যদি ইন্সটলেশনের সময় এরর ব্লুস্ক্রিন আসে তাহলেও বুঝতে হবে এটি র‌্যামের সমস্যা। উপরের পদ্ধতিগুলোই অনুসরণ করুন।
**    আরও যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন তা হচ্ছে হার্ডডিস্ক-এর যে ড্রাইভে সেটআপ করবেন সেটি এনটিএফএস কিনা এবং পর্যাপ্ত জায়গা সেখানে আছে কিনা।
**  এছাড়া  অনেক ব্র্যান্ড পিসি এক্সপি বর্তমানে সেটআপ নিতে চায়না।খানে আপনার কিছু করার নেই।নির্মাতা থেকেই এটি করে দেয়া হয়েছে।

পিসি বারবার রিস্টার্ট হলে
অনেক সময়ই এই সমস্যা দেখা যায়। কাজের সময় যখন তখন পিসি রিস্টার্ট হচ্ছে। অথবা, উইন্ডোজ লোড হয়েই আবার রিস্টার্ট করছে। বিভিন্ন কারণে এই সমস্যা হতে পারে। আসুন দেখে নিই কারণগুলো-
**    সাধারণত ভাইরাস আক্রমণের কারণে এমনটি হয়। তাই এন্টিভাইরাস ইন্সটল করে পিসি স্ক্যান করুন। তাতেও কাজ না হলে উইন্ডোজ ইন্সটল ছাড়া গতি নেই।
**   ইন্টারনেট অপরিচিত মেইল, এটাচমেন্ট, মেসেজ ওপেন করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ এভাবেই ভাইরাস বেশি ছড়ায়।
**    র‌্যামের সমস্যা বা ভিন্ন ভিন্ন বাসস্পিডের র‌্যাম থাকলে এমনটি হতে পারে। একই বাস স্পিডের র‌্যাম সবসময় ব্যবহার করবেন।
**    মাঝে মাঝে কোনো সফটওয়্যার ইন্সটলেশনের কারণেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। কাজেই মনে করুন এই সমস্যা করার আগে কোন কাজটি করেছিলেন। মনে থাকলে সেটি রিমুভ করে ফেলুন।
**    পিসিতে নতুন সংযুক্ত কোনো হার্ডওয়্যার কনফ্লিক্টের কারণেও এটি হতে পারে। এমতাবস্থায় হার্ডওয়্যারটি খুলে ড্রাইভার আনইন্সটল করুন।
**    সিপিইউর যন্ত্রাংশে ধুলাবালি জমেও এমনি হতে পারে। তাই নিয়মিত কম্পিউটার পরিষ্কার রাখুন ও যতটা সম্ভব শুষ্ক ঠান্ডা স্থানে রাখুন।
**  বায়োসে সিপিইউ ফ্যানের প্রোফাইলে সমস্যার কারনেও এটা হতে পারে।হয়তো আপনার ফ্যান প্রোফাইল সাইলেন্ট করে রাখা,একারনে দরকারি হেভীওয়েট কাজের সময় সিপিইউ পর্যাপ্ত তাপ নির্গমন করতে না পেরে পিসি রিস্টার্ট নেয়।এক্ষেত্রে বায়োসে গিয়ে ফ্যান প্রোফাইল ইন্টিলিজেন্ট বা টার্বো করে দিন।
**   আর ভোল্টেজ উঠানামার কথা নাহয় নতুন করে আর নাইবা বললাম।

কম্পিউটার হার্ডডিস্ক না পেলে কী করা উচিত
কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের এ ধরনের সমস্যায় প্রায়ই  পড়তে হয়। বিভিন্ন কারণে কম্পিউটারে পাওয়ার দেওয়ার পর হার্ডডিস্ককে কম্পিউটার ডিটেক্ট করতে পারে না।সমস্যার সম্ভাব্য কারণসমূহ এবং এমতাবস্থায় কি করবেন এবারে তা বলছি:
১. ভালোভাবে লক্ষ্য করুন হার্ডডিস্কের সাথে কেসিংয়ের পাওয়ার সাপ্লাই থেকে আসা পাওয়ার কর্ডটি ঠিকমতো সংযুক্ত আছে কি-না।
২. হার্ডডিস্কটির সাথে মাদারবোর্ডের আইডিই বাস ক্যাবল অথবা সাটা ক্যাবল দ্বারা সঠিকভাবে সংযুক্ত আছে কি-না।
৩. হার্ড ডিস্কের জাম্পার সেটিং ঠিক আছে কিনা ? এক্ষেত্রে হার্ডডিস্কের জাম্পার দুইভাবে সেট করা যায় একটি মাস্টার সেটিং অন্য স্লেভ সেটিং। এক্ষেত্রে আপনাকে মাস্টার সিলেক্ট করতে হবে।
252 পিসি ট্রাবলশ্যুটিং পর্ব ৭: কম্পিউটার হার্ডডিস্ক না পেলে কি করবেন | Techtunes
৪. হার্ড ডিস্কটি মাদারবোর্ডের সাথে প্রাইমারি না সেকেন্ডারি হিসেবে সংযুক্ত নিশ্চিত হোন।
৩ ও ৪ নং কনফিগারেশরনের জন্য যদি একই সেটিংসে একাধিক IDE Device থাকে তবে তা (CD/DVD ROM,HDD) পাওয়া নাও যেতে পারে- যেমন দেখা গেল যে একটি HDD ও একটি DVD ROM উভয়েই Secondary master হিসেবে কনফিগার করা। এক্ষেত্রে দুটি Device-এর কোনো একটি নাও পাওয়া যেতে পারে।
৫. BIOS-এ IDE অটো ডিটেক্ট অপশনটি ডিজেবল থাকলে তা ৪টি IDE ডিভাইসের জন্য এনাবল করতে হবে নতুবা ম্যানুয়ালি HDD কে ডিটেক্ট করিয়ে দিতে হবে।

পিসির কনফিগারেশন
কম্পিউটারের যে কোনো সমস্যা আর হার্ডওয়্যারের সমস্যাতো তো বটেই সবার আগে আপনার প্রয়োজন পড়বে পিসির কনফিগারেশন অর্থাৎ প্রসেসর, র‌্যাম, মাদারবোর্ড, হার্ডডিস্ক, সাউন্ড কার্ড, এজিপি কার্ড কোনটি কোন কোম্পানির কি মানের তা জানার। দেখা যায় যে বেশিরভাগ মানুষই অন্য কারো সহায়তা বা দোকানির পরামর্শে কম্পিউটার কেনেন এবং পরে যখন কোনো সমস্যায় পড়ে অন্য কারো দারস্থ হন তখন আর কনফিগারেশন বলতে পারেন না। এতে সমাধানকারীকে অতিরিক্ত ঝামেলায় পড়তে হয়। এই তথ্যগুলো তাই জেনে নিয়ে দরকার পড়লে লিখে রাখুন। তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমাধানকারীর জন্য সমস্যার কারণ খুঁজে পাওয়াটা সহজ হয়ে যায়।
এই বেসিক কনফিগারেশনগুলো জানতে বেশ কয়েকটি উপায় রয়েছে। মাই কম্পিউটারে রাইট ক্লিক করে প্রোপ্রার্টিজে গিয়ে জেনারেল ট্যাব থেকে জেনে নিতে পারবেন প্রসেসর, র‌্যাম ও অপারেটিং সিস্টেম সংক্রান্ত তথ্য। গ্রাফিক্স বা ডিসপ্লে প্রোপ্রার্টিজে গিয়ে ইনফরমেশন থেকে জানতে পারবেন গ্রাফিক্সকার্ড সংক্রান্ত তথ্য। আর অনেকক্ষেত্রেই কম্পিউটার কেনার ক্যাশমেমোতেই এসব বিস্তারিত লিখা থাকে। আরেকটি কাজ করতে পারেন। কোনো অভিজ্ঞ ব্যবহারকারীর সহায়তায় জেনে নিতে পারেন তথ্যগুলো। যেভাবেই যাই জানুন না কেন তা ভালোভাবে লিখে যত্নসহকারে রেখে দিন।

বিল্ট ইন
এখন প্রায় সব কম্পিউটারেই বিল্টইন কিছু না কিছু থাকেই। যেমন- এজিপি কার্ড, সাউন্ড কার্ড, ল্যান কার্ড ইত্যাদি। বিল্টইন অর্থ এই হার্ডওয়্যারটি আপনার মাদারবোর্ডে দেয়াই আছে। আপনি আলাদা না কিনে এটি দিয়েই কাজ চালাতে পারেন। কিন্তু কথায় আছে সস্তার দশ অবস্থা। কোম্পানি বা দোকানি যতই গলা ফটাক না কেন এটা বুঝতে খুব বেশি বুদ্ধিমান হবার দরকার পড়ে না যে, পারফরমেন্সে বিল্টইন হার্ডওয়্যারটি কখনই স্বতন্ত্র হার্ডওয়্যারের সমকক্ষ হতে পারে না। তবে যারা সাধারণ বা মাঝারি মানের ব্যবহারকারী তাদের জন্য বিল্টইন সাউন্ড বা এজিপি কার্ডই যথেষ্ঠ। আর বিল্টইন ল্যান কার্ড দিয়ে সমস্যা ছাড়াই কাজ চালাতে পারেন। তবে একটা কথা। যারা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট লাইন নেন তাদের সবার ল্যান কার্ডের ফিজিকাল বা ম্যাক এড্রেস কিন্তু সংশ্লিষ্ট আইএসপি নিয়ে রেকর্ড করে রাখে।ফলে মাদারবোর্ডে কোনো সমস্যা হলে নেট লাইন নিয়ে বিপদে পড়বেন আপনি। এক্ষেত্রে আইএসপি’র শরণাপন্ন আপনাকে হতেই হবে। আর আলাদা ল্যানে যে বাড়তি সুবিধা একই কারণে পাবেন তা হচ্ছে এটি অন্য পিসিতে লাগিয়ে একই নেট কানেকশন কাজের সময় ব্যবহার করতে পারবেন আপনি।ম্যাক এড্রেস পরিবর্তনের উ্পায় অবশ্য আছে কিন্তু এই টিউনে তা আমার আলোচ্য না।
techtoday4u.blogspot পিসি ট্রাবলশ্যুটিং পর্ব ৮:জেনে রাখা ভাল | Techtunes
আর বিল্টইন সাউন্ড কার্ড বা এজিপিতে সমস্যা হলে তা বেশ বিড়ম্বনাকর। অনেকক্ষেত্রে মাদারবোর্ডের উপরই চাপটা পড়ে বেশ জটিলাকার ধারণ করে। তবে মনে রাখবেন, বিল্টইন এজিপি মানেই এটি আপনার সিস্টেম থেকে র‌্যাম শেয়ার করে। তাই বিল্টইন এজিপি ব্যবহার করলে বাড়তি র‌্যাম লাগানোটাই ভালো। নাহলে সিস্টেম স্লো হয়ে যাওয়া বা হ্যাং করাসহ অনেক সমস্যাই হতে পারে আপনার।একটা সহজ পয়েন্ট উল্লেখ করি।ক্রিয়েটিভের ভালোমানের সাউন্ড কার্ডের দাম ৪০০০ টাকার উপরে,এনভিডিয়ার ৯৬০০ জিটি ১ গিগাবাইট র‌্যামবিশিষ্ট এজিপির দাম ১৫০০০ টাকা।আর সুপার-ডুপার সাউন্ড(!),১৭৫৮ মেগাবাইট পর্যন্ত এজিপি বিশিষ্ট মাদারবোর্ড আপনি ৭০০০ টাকাতেই পাবেন!!আর কিছু বলতে হবে?

পাওয়ার এবং পাওয়ার সাপ্লাই
কম্পিউটারের অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ অংশ এই পাওয়ার সাপ্লাই। এর কারণে অনেক সমস্যাই হতে পারে। ইউপিএস কেন ব্যবহার করবেন, কেন করবেন না এই নিয়ে বেশি কিছু বলব না। শুধু বলব অস্থিতিশীল ভোল্টেজ সাপ্লাই আপনার মূল্যবান হার্ডওয়্যারের মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে আর্থিং। ভালো আর্থিং কম্পিউটারের জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। কোনো ইলেকট্রিশিয়ানকে ডেকে আপনার আর্থিং ঠিক আছে কিনা তা চেক করে নিতে পারে। আর্থিং না থাকার কারণে অনেক সময় কোনো কোনো হার্ডওয়্যার ঠিকমতো কাজ নাও করতে পারে। মনিটর কাঁপতে পারে, কেসিং-এর বডি শক করতে পারে; এমনকি মাদারবোর্ড বা হার্ডডিস্কের ক্ষতি পর্যন্ত হতে পারে।
আরেকটি সমস্যা অনেকসময় দেখা যায়। কম্পিউটারের উপর যখন বেশি চাপ পড়ে। হাইএন্ড গেম বা এপ্লিকেশন রান করতে যায় তখন পিসি রিস্টার্ট করে। এর সম্ভাব্য কারণ হতে পারে অপর্যাপ্ত পাওয়ার সাপ্লাই। অর্থাৎ কাজের সময় আপনার পাওয়ার সাপ্লাই মাদারবোর্ডে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে না। এক্ষেত্রে আপনাকে পাওয়ার সাপ্লাইটি পরিবর্তন করতে হবে।
70 পিসি ট্রাবলশ্যুটিং পর্ব ৮:জেনে রাখা ভাল | Techtunes
জানেন কি কম্পিউটারের ভেতরের যাবতীয় হার্ডওয়্যার চলে ডিসি পাওয়ারে? এসি ২২০ ভোল্ট পাওয়ারকে পাওয়ার সাপ্লাই ডিসি ৩.৫ ভোল্ট, ৫ ভোল্ট ও ১২ ভোল্টে রূপান্তর করে মাদারবোর্ডে সরবরাহ করে। ফলে সিপিইউর ভেতর যে কারেন্ট থাকে তা বিপদজনক নয়। তবে যদি পাওয়ার অন করে কখনও কাজ করতে হয় তখন খেয়াল রাখবেন যেন শর্টসার্কিট না হয় এবং আপনার পায়ে যেন শুকনা জুতা থাকে।

পিসির যত্ন
শুধুমাত্র মাত্র টেকনিক্যাল কারণ বা সমস্যাতেই যে পিসি নষ্ট হয় বা সমস্যা হয় ব্যাপারটা কিন্তু এমন না।আমাদের ব্যবহার পদ্ধতি,রক্ষনাবেক্ষনের উপরো এসব কিছু অনেকাংশে নির্ভরশীল।আপনার একটু সতর্কতাই পারে আপনার পিসিকে দীর্ঘায়ু দিতে।আসুন আজ আপনাদের বলব তেমনি কিছু সচেতনতার কথা যেগুলা মাথায় রেখে কাজ করলে অনেক অনাকাংখিত ঝামেলা থেকেই মুক্তি পাবেন আপনি।

ভোল্টেজের ওঠানামা
পাওয়ার সকেট ঠিকমতো ভু-সংযুক্ত(আর্থিং) থাকতে হবে। আজকাল যদিও অধিকাংশ ব্যবহারকারী ভূ-সংযোগ ছাড়াই পিসি চালান তবে পিসির সংবেদনশীলতা বিবেচনায় ভূ-সংযোগ থাকা ভালো। একটি সকেটের উপর মাল্টিপল না চাপিয়ে পাওয়ার স্টিপ ব্যবহার করুন। হিটার, এসি, ফ্রিজ বা ওয়াশিং মেশিনের সাথে যুক্ত পাওয়ার লাইন বাদ দিয়ে পিসির জন্য আলাদা একটি পাওয়ার পয়েন্ট ব্যবহার করুন। লোডশেডিং-এর ঝামেলা থেকে রেহাই পেতে ইউপিএস ব্যবহার করতে পারেন। তবে তা ব্যবহারের আগে ঠিকমতো কাজ করছে কি-না পরখ করে নিবেন। এবং পিসির সবক’টি পেরিফিরিয়ালের লোড নিতে সক্ষম কি-না তা-ও যাচাই করে দেখুন।অযথা প্রিন্টার বা স্ক্যানার ইউপিএস এর সাথে লাগাবেন না।

তাপমাত্রার তারতম্য
তাপমাত্রার পরিবর্তনের প্রতি কম্পিউটার বেশ সংবেদনশীল। ঠাণ্ডা আবহাওয়াই পিসির পক্ষে অনুকূল। তবে খুব শীতল আবহাওয়া নয়। আপনি যদি এটি সরিয়ে নিয়ে এমন কক্ষে রাখেন যেখানে তাপমাত্রা ভিন্ন রকমের তবে সেটা সাথে সাথে চালু না করে কিছুটা সময় নিয়ে করবেন। নতুন আবহাওয়ার সাথে কম্পিউটারকে আগে পরিচিত হতে দেন। 

তাপ, ধুলোবালি এবং আর্দ্রতা
বর্তমানের উন্নত ও দ্রুতগতির কম্পিউটারগুলি ব্যবহার করা উচিত সাবধানতার সাথে। সরাসরি সূর্যের আলো লাগে এরকম জায়গায় একে রাখবেন না। এমন জায়গায় না যেখানে তাপমাত্রা খুব দ্রুত বদল হয় যেমন এসি, এয়ারকুলার বা হিটার এদের কাছাকাছি স্থান। এসি করা ঘরে যদি কম্পিউটার রাখেন তাহলে লক্ষ রাখতে হবে যেন এসির বাতাসের সরাসরি প্রবাহ তাতে না লাগে। প্রচুর জলীয় বাস্পযুক্ত বাতাস পিসির বিভিন্ন অংশগুলি ড্যাম্প করে দিতে পারে। কিছুটা ঠাণ্ডা, শুকনো এবং ধুলোমুক্ত পরিবেশ কম্পিউটার রাখার জন্য উপযুক্ত স্থান। গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চল হওয়ায় এদেশে কম্পিউটার ব্যবহারে সাবধানী হওয়া বিশেষ প্রয়োজন। উষ্ণতা এর অন্যতম শত্রু। কম্পিউটারের কক্ষটিতে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা বাঞ্চনীয়। ফ্যানযুক্ত সিপিইউ কেবিনেট ব্যবহার করুন।

পিসির কভার
লক্ষ রাখবেন আপনার পিসির কভার যেন যথাযথ অবস্থায় থাকে। ড্রাইভ অথবা স্লট দিয়ে যেন বাইরের ধুলোবালি, পোকামাকড় না ঢোকে। পিসি চালানোর সময় কোনো কিছু ঢেকে ভেন্টিলেশন ছিদ্র বন্ধ করবেন না। তাহলে ব্যবহারের সময় অত্যধিক উষ্ণ হয়ে যাবে সেটা। তবে ব্যবহারের পর পিসি ঠাণ্ডা হওয়ার পরে তা কাপড় অথবা কোনো আবরণী দিয়ে ভালো করে ঢেকে রাখবেন। শীতের দিনে ইঁদুর, টিকটিকি আশ্রয় নিতে পারে কম্পিউটারের ভেতরে। তাছাড়া এর মধ্যে মাকড়সাও জাল বুনতে পারে। সেজন্য মাঝে মধ্যে কেস খুলে দেখতে পারেন তা পরিষ্কার আছে কিনা

পিসির গতিবৃদ্ধি
কোনো কোনো সময় মেশিন পূর্বের তুলনায় ধীর সময়ে কাজ করতে পারে। এতে বিচলিত না হয়ে কারণ নির্ণয়ের চেষ্টা করুন। বেশিরভাগ সময়ে দেখা যায় বাহুল্যজনিত কারণে অর্থাৎ প্রয়োজনীয় যে সকল প্রোগ্রাম রয়েছে সেগুলোর কারণে সিস্টেম স্লো হতে পারে। পিসি বুটিংয়ে যদি অনেকগুলো ইউটিলিটি ওপেন করে রাখা হয় সেক্ষেত্রে এই সময় বাড়তে পারে। কোনো কোনো সময় হার্ডডিস্কের জায়গা কমে আসার জন্যও এই সময় লাগতে পারে। 

স্ক্যানডিস্ক করা
প্রতি সপ্তাহে একবার অন্ততপক্ষে স্ট্যান্ডার্ড স্ক্যান ডিস্কটি চালান আপনার কম্পিউটারের ওপরে। স্ক্যানডিস্ক টুলসটি পাবেন স্টার্ট মেন্যুর প্রোগ্রাম>এক্সেসরিজ>সিস্টেম টুলসের ভেতরে।এটি চালালে দুটি অপশন পাবেন স্ট্যান্ডার্ড এবং থ্রু স্ক্যানের অপশন। ডিস্কের যে কোনো ধরনের সমস্যা, ডাটা করাপশনের সম্ভাবনা থাকলে তা সারাতে স্ক্যান ডিস্ক টুলটি ব্যবহার করতে হয়। আর থ্রু স্ক্যানডিস্কটি চালান প্রতি মাসে অন্তত একবার। আর আমাদের দেশে কারেন্ট খুব বেশি যাওয়া আসা করে। সেক্ষেত্রে যদি গুরুত্বপূর্ণ কোনো এপ্লিকেশন চালাতে থাকা অবস্থায় কারেন্ট চলে যায় তবে পরবর্তীতে কম্পিউটার চালানোর পরে অবশ্যই স্ট্যান্ডার্ড স্ক্যানডিস্ক করুন। এজন্য প্রয়োজনে স্ক্যানডিস্কের একটি শর্টকার্ট তৈরি করে রাখতে পারেন ডেস্কটপে।

নিয়মিত ডিফ্র্যাগমেন্ট করা
ডিফ্র্যাগ টুলটির সাথেও আপনার নিয়মিত পরিচয় থাকা ভালো। এটি হার্ডডিস্কের এফিসিয়েন্সি বাড়িয়ে দেয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফাইলগুলোকে এক সাথে এনে। প্রোগ্রাম দ্রুত চালাতে চাইলে মাঝে মধ্যেই ডিফ্র্যাগ করা প্রয়োজন। কত নিয়মিত ডিফ্র্যাগ করা উচিত ? নির্ভর করে কত দ্রুত আপনি সফটওয়্যার ইন্সটল ও আনইন্সটল করেন তার ওপরে। যদি আপনার মাঝে মধ্যেই হার্ডডিস্কে প্রচুর পরিমাণে ডাটা পরিবর্তন হয়ে থাকে তবে দু সপ্তাহে একবার ডিফ্র্যাগ করতে পারেন।নতুবা মাসে একবার করলেই হবে। 

খুব বেশি সফটঅয়্যার ইন্সটল না করা
আমাদের অনেকেরই এই অভ্যাস আছে যে যে কেউ যেকোন সফটওয়ারের কথা বললেই আমরা নিজের পিসিতে ইন্সতল করে ফেলি।এটা আদৌ আমাদের কোন কাজে আসবে কিনা তা ভেবে দেখি না।সেই যে ইন্সটল করে একবার চালিয়ে দেখা সেটাই কিন্তু শেষ।জীবনেও দেখা যায় ঐ প্রোগ্রাম আর খুলে দেখা হয় না।আর এভাবেই আমরা আমাদের উইন্ডোজকে আরো স্লো হতে যথেষ্ঠ সাহাজ্য করি।দয়া করে এই কাজটি থেকে বিরত থাকবেন।প্রোগ্রাম যতটা সম্ভব কম ইন্সত্যল করবেন।কেননা পরে আনইন্সটল করলেও দেখা যায় এর কিছু না কিছু ভ্যালু রেজিস্ট্রিতে রয়ে যায়।তাই এই কাজ থেকে বিরত থাকুন।

যে-সব কাজ কখনো করা উচিত নয়
** চলন্ত অবস্থায় সিপিইউতে ঝাঁকুনি দেবেন না। এতে বিদ্যুতিক শক লাগতে পারে কিংবা হার্ডডিস্ক ও অন্যান্য কম্পোনেন্টে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
** ঢাকনাবিহীন স্পিকার- সিভিটি অথবা ইউপিএস মনিটরের কাছাকাছি আনবেন না। বিদ্যুৎ চুম্বকীয় বাধার সৃষ্টি হতে পারে।
** পিসি চালু রেখে কিছু পান করবেন না বা ধুমপান করবেন না। কারণ তরল কী-বোর্ডে পড়ে যেতে পারে অথবা ধোঁয়ার ক্ষুদ্র কণিকা ঢুকে পড়তে পারে কম্পিউটারে। 

শেষ কথা
ট্রাবলশুটিং নিয়ে এতোক্ষণ অনেক কথাই হলো। আশাকরি এর কোনো না কোনোটি আপনার দৈনন্দিন কম্পিউটার সমস্যায় কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। তবে বড় কথা হচ্ছে কম্পিউটারে প্রতিদিনই নিত্যনতুন বিচিত্র সব সমস্যা দেখা দেয়। তার অনেকগুলোই মাথা ঘুরিয়ে দেবে আপনার। আবার অনেকগুলোর কোনো সমাধান নেই। যেমন কম্পিউটার মাঝে মাঝে চালু হয় না। ডিকশনারীর এ টু জেড সবকিছুই চেষ্টা করে ব্যর্থ আপনি। কিন্তু দেখলেন পরদিন আপনার চোখকে কপালে তুলে দিয়ে দিব্যি কম্পিউটার চালু হয়ে গেছে। একটা কথাই বলবো, কম্পিউটারের সব সমস্যার কারণ খুঁজতে যাবেন না। তা হবে বোকামি। অনেকক্ষেত্রেই যন্ত্রটি খামখেয়ালি। মনে রাখবেন কথাটি।

বুধবার, ডিসেম্বর ১৬, ২০০৯

Run কমান্ডের বহুবিধ ব্যবহার

Run কমান্ডের বহুবিধ ব্যবহার নিম্নরূপ :

Accessibility Options : access.cpl
Add Hardware : hdwwiz.cpl
Add/Remove Programs : appwiz.cpl
Administrative Tools : control admintools
Automatic Updates : wuaucpl.cpl
Wizard file transfer Bluethooth : fsquirt
Calculator : calc
Certificate Manager : certmgr.msc
Character : charmap
Checking disk : chkdsk
Manager of the album (clipboard) : clipbrd
Command Prompt : cmd
Service components (DCOM) : dcomcnfg
Computer Management : compmgmt.msc
DDE active sharing : ddeshare
Device Manager : devmgmt.msc
DirectX Control Panel (if installed) : directx.cpl
DirectX Diagnostic Utility : dxdiag
Disk Cleanup : cleanmgr
Disk Defragmenter : dfrg.msc
Disk Management : diskmgmt.msc
Partition manager : diskpart
Display Properties : control desktop
Properties of the display (2) : desk.cpl
Properties display (tab "appearance") : control color
Dr. Watson : drwtsn32
Manager vérirficateur drivers : check
Event Viewer : Eventvwr.msc
Verification of signatures of files : sigverif
Findfast (if present) : findfast.cpl
Folder Options : control folders
Fonts (fonts) : control fonts
Fonts folder windows : fonts
Free Cell ... : freecell
Game Controllers : Joy.cpl
Group Policy (XP Pro) : gpedit.msc
Hearts (card game) : mshearts
IExpress (file generator. Cab) : IExpress
Indexing Service (if not disabled) : ciadv.msc
Internet Properties : inetcpl.cpl
IPConfig (display configuration) : ipconfig/all
IPConfig (displays the contents of the DNS cache) : ipconfig/displaydns
IPConfig (erases the contents of the DNS cache) : ipconfig/flushdns
IPConfig (IP configuration cancels maps) : ipconfig/release
IPConfig (renew IP configuration maps) : ipconfig/renew
Java Control Panel (if present) : jpicpl32.cpl
Java Control Panel (if present) : javaws
Keyboard Properties : control keyboard
Local Security Settings : secpol.msc
Local Users and Groups : lusrmgr.msc
Logout : logoff
Microsoft Chat : winchat
Minesweeper (game) : winmine
Properties of the mouse : control mouse
Properties of the mouse (2) : main.cpl
Network Connections : control NetConnect
Network Connections (2) : ncpa.cpl
Network configuration wizard : netsetup.cpl
Notepad : notepad
NView Desktop Manager (if installed) : nvtuicpl.cpl
Manager links : packager
Data Source Administrator ODBC : odbccp32.cpl
Screen Keyboard : OSK
AC3 Filter (if installed) : ac3filter.cpl
Password manager (if present) : Password.cpl
Monitor performance : perfmon.msc
Monitor performance (2) : perfmon
Dialing Properties (phone) : telephon.cpl
Power Options : powercfg.cpl
Printers and Faxes : control printers
Private Character Editor : eudcedit
Quicktime (if installed) : QuickTime.cpl
Regional and Language Options : intl.cpl
Editor of the registry : regedit
Remote desktop connection : mstsc
Removable Storage : ntmsmgr.msc
requests the operator to removable storage : ntmsoprq.msc
RSoP (traduction. ..) (XP Pro) : rsop.msc
Scanners and Cameras : sticpl.cpl
Scheduled Tasks : control schedtasks
Security Center : wscui.cpl
Console management services : services.msc
shared folders : fsmgmt.msc
Turn off windows : shutdown
Sounds and Audio Devices : mmsys.cpl
Spider (card game) : spider
Client Network Utility SQL server : cliconfg
System Configuration Editor : sysedit
System Configuration Utility : msconfig
System File Checker (SFC =) (Scan Now) : sfc/scannow
SFC (Scan next startup) : sfc/scanonce
SFC (Scan each démarraget) : sfc/scanboot
SFC (back to default settings) : sfc/revert
SFC (purge cache files) : sfc/purgecache
SFC (define size CAHC x) : sfc/cachesize = x
System Properties : sysdm.cpl
Task Manager : taskmgr
Telnet client : telnet
User Accounts : nusrmgr.cpl
Utility Manager (Magnifier, etc) : utilman
Windows firewall (XP SP2) : firewall.cpl
Microsoft Magnifier : magnify
Windows Management Infrastructure : wmimgmt.msc
Protection of the accounts database : syskey
Windows update : wupdmgr
Introducing Windows XP (if not erased) : tourstart
Wordpad : write
Date and Time Properties : timedate.cpl

মজিলা ফায়ারফক্সে ব্রাউজিং স্পিড বাড়াতে কিছু টিপস্

Firefox চালু করে এড্রেসবারে about:config টাইপ করে এন্টার করুন। ফায়ারফক্সের কনফিগারেশন পেজ চালু হবে।

HTTP PIPELINING এনাবল করুন:
১. HTTP পাইপলাইনিং এনাবল করে আপনি ব্রাউজিং এর গতি বাড়াতে পারেন। এর জন্য ওপেন হওয়া কনফিগারেশন পেজের ফিল্টারে টাইপ করুন network.http.pipelining. দু'টো ভ্যালু পাবেন।
২. network.http.pipelining.ssl অপশনের ভ্যালু True করুন।(ডাবল ক্লিক করলে False থেকে True হবে।)
৩. network.http.pipelining.maxrequests অপশনে ডাবল ক্লিক করে এর ভ্যালু বাড়িয়ে নিন।(ডিফল্ট থাকে ৪ আপনি আপনার নেট লাইনের গতি বুঝে পরিবর্তন করুন। আমার ব্রাউজারে এটি ৮ করা আছে।)

HTTP PROXY পাইপলাইন এনাবল ও network.dns.disableIPv6 ট্রু করুন:
১. HTTP PROXY পাইপলাইন এনাবল করতে ফিন্টারে টাইপ করুন- network.http.proxy.pipelining।
২. network.http.proxy.pipelining অপশনের ভ্যালু পরিবর্তনের জন্য ডাবল ক্লিক করে True করুন।
৩. ফিন্টার বক্সে network.dns.disableIPv6 লিখুন।
৪. network.dns.disableIPv6 অপশনে ডাবলক্লিক করে True করুন।

CONTENT INTERRUPT PARSING যুক্ত করুন:
১. এই অপশনটি আগে থেকে থাকে না। সুতরাং আপনাকে যুক্ত করে নিতে হবে।
২. about:config এ রাইট ক্লিক করে একটি New -> Boolean যুক্ত করুন।
৩. New boolean value নামের যে পপ আপ উইন্ডোটি আসবে সেখানে content.interrupt.parsing টাইপ করুন।
৪. True ভ্যালু সেট করে OK করুন।

CONTENT MAX TOKENIZING TIME যুক্ত করুন:
১. about:config এ রাইট ক্লিক করে একটি New -> Integer যুক্ত করুন।
২. content.max.tokenizing.time লিখে OK করুন।
৩. ভ্যালু হিসেবে 2250000 সেট করে OK করুন।

CONTENT NOTIFY ONTIMER:
১. about:config এ রাইট ক্লিক করে একটি New -> Boolean যুক্ত করুন।
২. পপ আপ বক্সে content.notify.ontimer টাইপ করে ওকে করুন।
৩. ভ্যালু হিসেবে True নির্বাচন করুন।

CONTENT NOTIFY BACKOFFCOUNT:
১. about:config এ রাইট ক্লিক করে একটি New -> Integer যুক্ত করুন।
২. content.notify.backoffcount লিখে OK করুন।
৩. ভ্যালু হিসেবে সেট করুন ৫।

Firefox বন্ধ করে আবার চালু করুন এবং ব্রাউজ করে দেখুন। পার্থক্যটা নিজেই ধরতে পারবেন।

সোমবার, ডিসেম্বর ১৪, ২০০৯

'পেংওয়া' থেকে কক্সবাজার

বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে একটি হচ্ছে সীমান্ত জেলা কক্সবাজার। দেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে ২০.৩৫ ডিগ্রি থেকে ২১.৫৬ ডিগ্রি উত্তর অক্ষরেখা এবং ৯১.৫০ ডিগ্রি থেকে ৯২.২৩ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমা রেখার মধ্যে এর অবস্থান। এর উত্তরে চট্টগ্রাম, পূর্বে পার্বত্য বান্দরবান জেলা ও মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ, দক্ষিণ ও পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর এবং দক্ষিণ-পূর্বে আন্তর্জাতিক রেখা বরাবর 'নেহ ম্রাই' অর্থাৎ নাফ নদী অবস্থিত। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দের পরিসংখ্যান অনুযায়ী জেলার আয়তন ২ হাজার ২৬০ বর্গকিলোমিটার এবং লোকসংখ্যা ১০ লাখ ২৬ হাজার ১৭২ জন। রামু, চকরিয়া, মহেশখালি, টেকনাফ, উখিয়া, কুতুবদিয়া ও সদরসহ ৭টি থানা নিয়ে গঠিত এই জেলার নামকরণ হয়েছে মূলত কক্সবাজার সদরের নাম থেকেই। 'কক্সবাজার' নামটি ইতিহাসের বিবেচনায় খুব প্রাচীন নয়, মাত্র ২০০ বছরের পুরোনো। কিন্তু এলাকার ভূভাগটি যেমন প্রাচীন তেমনি এই ভূভাগের ইতিহাসও সুপ্রাচীন। কক্সবাজারের বর্তমান নামের মধ্যে স্মৃতি হিসাবে অম্লান ও অক্ষয় রয়েছে সাতসমুদ্দুর তেরো নদী পারের এক সৈনিক 'ক্যাপ্টেন হাইরাম কক্স'-এর নাম।
বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকার মতো কক্সবাজারের নামকরণকে ঘিরেও প্রচলিত রয়েছে হরেক কিংবদন্তি। ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজ ঐতিহাসিক 'জোঁ অ্যা দ্য বেরোস' তাঁর মানচিত্রে এবং ১৫৫৪ খ্রিস্টাব্দে তুর্কি নাবিক 'ছিদি আলি ছিদিবি' তাঁর বর্ণনায় এই অঞ্চলের নাম বাকোলিয়া বলে উল্লেখ করেছেন। ইতিহাস গবেষকদের মতে কক্সবাজারের প্রাচীন নাম 'পেংওয়া'। এটি একটি রাখাইন শব্দ যার অর্থ হলদে ফুল। কক্সবাজার সদরের পার্শ্ববর্তী থানা রামু অঞ্চলটি রাখাইনদের কাছে আজও 'পেংওয়া' বা 'পাংওয়া' নামে পরিচিত। ধারণা করা হয়ে থাকে যে, খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতাব্দির মাঝামাঝি পর্যন্ত কক্সবাজার শহরাঞ্চলসহ বর্তমান রামু অঞ্চলটির পরিচিতি ছিল 'পেংওয়া' নামে।
১৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে আরাকান রাজা শ্রী সুধম্মার মৃত্যুতে সমগ্র আরাকানে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য প্রকটভাবে দেখা দেয়। সেই সময় শ্রী সুধম্মার পুত্র 'ঙা থোয়েং খাইং' আরাকান থেকে পালিয়ে এসে বাকোলিয়া (এর বর্তমান নাম বাঁকখালি) নদীর তীরে এক ছোট পাহাড়ে আশ্রয় নেন। পরবর্তীকালে তাঁর সহযোগী আরাকানের সাবেক মন্ত্রী 'ঙা লাহ রুন' বৌদ্ধ ভিক্ষু হয়ে 'উ অগ্গমেধাবী' নাম ধারণ করে পাহাড়ের পাদদেশে নতুন বসতি স্থাপন করেন এবং এর নাম রাখেন 'অং খ্যেং থা'। নতুন বসতি স্থাপনের ফলে খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতাব্দির দ্বিতীয়ার্ধে তৎকালীন 'পেংওয়া'র একাংশ নতুন বসতির নামে অর্থাৎ 'অং খ্যেং থা' হিসাবে পরিচিতি লাভ করে বলে অনেকে মনে করেন। এর পরের ইতিহাস তো সবার জানা।
১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে 'রাখাইন-প্রে' তথা আরাকানের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও কেন্দ্রীয় শাসনের প্রতি দেশবাসীর আস্থাহীনতার সুযোগে তৎকালীন বার্মার সাম্রাজ্যবাদী রাজা 'মং ওয়াইং' ওরফে 'বোদফারাহ' স্বাধীন আরাকান আক্রমণ করেন এবং আরাকানের তৎকালীন নির্বাচিত রাজা 'থামাদা'কে হত্যা করে সমগ্র আরাকান দখল করে নেন। পরবর্তীকালে বর্মি সেনাপতি 'বেনদুলা'র নেতৃত্বে পরাজিত আরাকানি তথা রাখাইনদের উপর হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। ১৭৮৫ থেকে ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মাত্র ৪ বছরে দখলদার বর্মি সেনাবাহিনী বর্বরোচিতভাবে প্রায় আড়াই লাখ নিরীহ রাখাইনকে হত্যা করে। এই হত্যাযজ্ঞ থেকে রেহাই পাওয়ার উদ্দেশ্যে আরাকানের দুই-তৃতীয়াংশ অধিবাসী তাদের পিতৃভূমি আরাকান থেকে পালিয়ে এসে তৎকালীন ব্রিটিশ শাসিত বৃহত্তর চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পটুয়াখালি এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিল। পালিয়ে আসা এসব শরণার্থীর পুনর্বাসন কার্যক্রম তদারকি করার জন্য ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সরকার ক্যাপ্টেন হাইরাম কক্সকে সুপারিনটেনডেন্ট পদে নিয়োগ করেন। পুনর্বাসন কার্যক্রম চলাকালে ক্যাপ্টেন হাইরাম কক্স স্থানীয়ভাবে একটা বাজারও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যার পরিচিতি ছিল 'কক্স সাহেবের বাজার' নামে। দায়িত্বে থাকাকালীন তিনি ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২ আগস্ট ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর প্রতিষ্ঠিত বাজারসহ পুরো এলাকাটাই 'কক্সবাজার' নামে পরিচিতি লাভ করে। 'কক্সবাজার' নামের উৎপত্তির ফলে এর পুরোনো 'অং খ্যেং থা' নামটি কালের গর্ভে হারিয়ে যায়। এই কক্সবাজার নামটি রাখাইনদের কাছে 'ফলং জিঃ' নামেই পরিচিত যার অর্থ শ্বেতাঙ্গ সাহেবের বাজার। তবে উচ্চারণগত বিকৃতির কারণে রাখাইনদের 'ফলং জিঃ' আজ 'ফলং খ্যি'-তে ঠেকেছে।
অসংখ্য মতভেদ আর গবেষণার পরও কালের স্রোতধারায় কিংবদন্তি হয়ে সকল নাম তলিয়ে গেছে সভ্যতার গহ্বরে। সবশেষে ক্যাপ্টেন হাইরাম কক্সকে চিরসম্মানিত করে তাঁর নামেই বর্তমানে 'কক্সবাজার' ইতিহাসে ঠাঁই নিয়েছে।

[পুনশ্চ : এই ফিচারটি আমারই লেখা, যা জাতীয় দৈনিক 'ভোরের কাগজ'-এর ৩১ আগস্ট ১৯৯৮ সংখ্যার পৃষ্ঠা-৫ ফিচার পাতায় ছাপা হয়েছিল। তখন কক্সবাজার জেলার থানা/উপজেলার সংখ্যা ছিল ৭টি। বর্তমানে পেকুয়াসহ ৮টি। আমি তখন প্রচলিত 'রাখাইন' বানানটি না লিখে উচ্চারণ অনুযায়ী 'রাখাইং' লিখতাম।]

বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১০, ২০০৯

Hard Disk-এর Partition ভাঙব কীভাবে?

মার Desktop PC টা কেনা হয়েছে প্রায় ছ'মাস আগে। PC টা কেনার আগ পর্যন্ত কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না, তবে কম্পিউটার সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা ছিল। Net Browsing-এর উদ্দেশ্যেই মূলত PC টা কেনা। কেনার সময় আমার Hard Disk-এর Partition করে দিয়েছিল এভাবে:
System (C):~~Capacity 14.6 GB~~এখন Free Space 4.1 GB (Percentage 28%)
Software (D):~~Capacity 70.7 GB~~এখন Free Space 68.2 GB (Percentage 96%)
Audio (E):~~Capacity 70.7 GB~~এখন Free Space 68.9 GB (Percentage 97%)
Video (F):~~Capacity 70.7 GB~~এখন Free Space 63.6 GB (Percentage 89%)
Collection (G):~~Capacity 71.0 GB~~এখন Free Space 67.9 GB (Percentage 95%)
এখানে উল্লেখ্য, আমি আমার প্রয়োজনীয় অধিকাংশ Software System (C) Drive-এ জায়গা না থাকায় Collection (G) Drive-এ Install করে রেখেছি।
টেকি ব্লগাররা বলে থাকেন যে, System (C) Drive-এর কমপক্ষে ৩৩% জায়গা খালি রাখতে/থাকতে হবে। না হলে Net Browsing-এর গতি কমে যাবে। এখানে আরও উল্লেখ্য, আমার RAM 2 GB (1 GB+1 GB করে দু'টি প্যারালাল)। এ ব্যাপারে বিক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা বলেন, আমার প্রয়োজনীয় File/Software গুলো অন্য একটা Portable Hard Disk-এ কপি করে তার পর PC-এর Hard Disk-এর Partition ভাঙতে হবে।
আমি চাই, Partition ভাঙার পর আমার প্রয়োজনীয় কোনো File/Software যেন হারিয়ে না যায়। এ ব্যাপারে আমি টেকি ব্লগারদের পরামর্শ/সহযোগিতা কামনা করছি।

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ০৮, ২০০৯

সফটঅয়্যার ছাড়াই সিডি/ডিভিডি রাইট করা যায়

সিডি/ডিভিডি রাইট করার নতুন পদ্ধতি। কোনো সফটঅয়্যার ছাড়াই সিডি/ডিভিডি রাইট করা যায়। প্রথমে যে ফাইলগুলো রাইট করব সেগুলোর উপর কার্সর রেখে রাইট বাটন ক্লিক করে সেন্ড টু দিয়ে সিডি/ডিভিডিতে ক্লিক করতে হবে। এখন টাস্কবারে নোটিফিকেশন দেখাবে, এটার উপর ক্লিক করতে হবে। ক্লিক করলে সিডি/ডিভিডি ড্রাইভ ওপেন হবে। ওখানে রাইট দিস ফাইল টু সিডি-তে ক্লিক করতে হবে। এর পর সিডি/ডিভিডি রাইটিং উইজার্ড আসবে। এখন সিডি/ডিভিডির নাম লিখে নেক্সট-এ ক্লিক করতে হবে। এবার সিডি/ডিভিডি রাইট হচ্ছে।

রবিবার, ডিসেম্বর ০৬, ২০০৯

ব্লগারদের দৃষ্টি আকর্ষণ

দানীং বাংলা/বাংলাদেশি ব্লগগুলোতে যে ভাষায় কিছু-কিছু পোস্ট লেখা ও পরবর্তীতে মন্তব্য প্রদান হচ্ছে তা পড়ে ভিরমি খেতে হয়। এই সমস্ত পোস্ট ও মন্তব্য এক কথায় অরুচিকর, অকথ্য, অশ্রাব্য ও অপাঠ্য। আর যাঁরা এসব করেন তাঁরা কেউ-ই আসল নামে ব্লগিং করেন না। তাঁদের Nick গুলোই এর প্রমাণ।
মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে অন্যতম পার্থক্য এই-- মানুষ লোকলজ্জার ভয়ে/কারণে অনেক কিছু প্রকাশ্যে করে না, যা অন্য প্রাণীগুলো করে।
Facebook-এর মতো ব্লগগুলোতেও যদি যার-যার প্রোফাইলে আসল ছবি ও প্রকৃত নাম-ঠিকানা দেওয়ার ব্যবস্থা/বাধ্যবাদকতা থাকত তা হলে বোধহয় পোস্ট ও মন্তব্যের ভাষা এই পর্যায়ে নেমে আসত না।
যুক্তি-তর্ক কিংবা বিশ্বাস-আদর্শের কথা প্রকাশ/প্রচারের জন্য ছদ্মনাম ধারণ করতে হবে কেন? যাঁরা ছদ্মনামে এসব করেন, আমি মনে করি তাঁদের বিশ্বাসে খাদ আছে কিংবা তাঁদের আদর্শ ভুয়া।

শনিবার, ডিসেম্বর ০৫, ২০০৯

PC কে fast রাখতে প্রয়োজনীয় টিপস্

 আপনার পিসি কে দ্রতগামী রাখুন ৪ টি টিপসে...(অভিজ্ঞদের প্রবেশ নিষেধ) | Techtunes


 আপনার পিসি কে দ্রতগামী রাখুন ৪ টি টিপসে...(অভিজ্ঞদের প্রবেশ নিষেধ) | Techtunes


 আপনার পিসি কে দ্রতগামী রাখুন ৪ টি টিপসে...(অভিজ্ঞদের প্রবেশ নিষেধ) | Techtunes

প্রথম টিপস্ : Run এর মাধ্যমে PC কে fast রাখা যায়। প্রথমে Start>Run-এ click করে  তার পর Text Bar-এ লিখতে হবে নিম্নরূপ :
tree লিখে তার পর Ok করা।
tree exe লিখে তার পর Ok করা।
temp লিখে তার পর Ok করা এবং Ctrl+A চেপে select করে delete করা।
%temp% লিখে তার পর Ok করা এবং Ctrl+A চেপে select করে delete করা।
prefetch লিখে তার পর Ok করা এবং Ctrl+A চেপে select করে delete করা।
recent লিখে তার পর Ok করা এবং Ctrl+A চেপে select করে delete করা।
recover লিখে তার পর Ok করা।
sfc লিখে তার পর Ok করা।

দ্বিতীয় টিপস্ : Event Viewer-এর মাধ্যমে PC কে fast রাখা যায়। এজন্য ধাপে-ধাপে Start>Settings>Control Panel>Administrative Tools>Event Viewer-এ click করতে হবে। এর পর নিম্নরূপ :
Application-এ right click করে তার পর Clear all Events-এ click করে No করা।
Security-এ right click করে তার পর Clear all Events-এ click করে No করা।
System-এ right click করে তার পর Clear all Events-এ click করে No করা।।

তৃতীয় টিপস্ : PC ২-৩ ঘণ্টা চলার পর অবশ্যই Win XP Drive ( Local Disk C )-এর Disk Cleanup করতে হবে।
এজন্য My Computer>Local Disk C-এর উপর right click করে তার পর Properties-এ click করে Disk Cleanup-এ click করতে হবে। তার পর সেখানে থাকা Downloaded Progarm Files, Offline Web Page ইত্যাদি বিষয় mark করে Ok করা।

চতুর্থ টিপস্ : PC ২-৩ ঘণ্টা চলার পর অবশ্যই একবার Stand By করতে হবে। Stand By করার জন্য Start>Turn off>Stand By-এ click করতে হবে। Stand By করতে হবে ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট। তার পর Key Board/Mouse-এ click করে PC On করতে হবে।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে মন্তব্য

মার জীবদ্দশায় দেখেছি বাংলাদেশ ভূখণ্ডে রোহিঙ্গাদের (বর্মি মুসলমান) দলে-দলে অনুপ্রবেশ ঘটেছে দু'বার, প্রথম বার ১৯৭৮-এ আর দ্বিতীয় বার ১৯৯১-এ। প্রথম বারের সমস্যাটা মোটামুটি সমাধান করে গছেন তৎকালীন সরকার। কিন্তু ১৯৯১-এর সমস্যাটার অদ্যাবধি সুষ্ঠু সমাধান হয়নি। কারণ তখনকার সরকার এই সমস্যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব চিন্তা না করে ধর্মীয় আবেগের তাড়নায় রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের সুযোগ দিয়েছিলেন। সেই দিনের সেই সরকারের বিচক্ষণতার অভাবই আমাদের আজকের ভোগান্তি। তখনকার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সাংবাদিকদের ভূমিকাও প্রশ্ন সাপেক্ষ। পরবর্তীতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ প্রশাসন এবং আমলারা এসব রোহিঙ্গাকে পাসপোর্ট তৈরি থেকে শুরু করে পাকিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গমনের সুযোগ করে দিয়েছে।

বুধবার, ডিসেম্বর ০২, ২০০৯

সেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, একজন টুটুল পাল এবং তসলিমার আশঙ্কা



তাঁর নাম টুটুল পাল। চাকরি করেন কক্সবাজারস্থ মুক্তি নারী সহায়তা কেন্দ্রে। তাঁর পদবি বহিঃসমন্বয়কারী। এই ধরনের সেচ্ছাসেবী সংগঠন/সংস্থায় চাকরি করতে যে পরোপকারি মানসিকতার প্রয়োজন, পত্রিকায় প্রকাশিত ঘটনার তথ্য অনুযায়ী আমার কিন্তু তাঁকে সেই ধরনের মানবিক গুণাবলি সমৃদ্ধ মানুষ বলে মনে হয় না। মুক্তি কর্তৃপক্ষও এর দায় এড়াতে পারেন না।
এই টুটুল পাল স্বামী কর্তৃক নির্যাতিতা (বর্তমানে মুক্তি নারী সহায়তা কেন্দ্রে আশ্রিতা) এক পুত্রসন্তানের জননী তসলিমা আক্তার (২০)-কে সহায়তার পরিবর্তে বিপদেই ঠেলে দিয়েছেন। স্বামী, সতিন ও সতিনের ছেলের বিরুদ্ধে লেখা তসলিমার এজাহারটি গায়েব করে দিয়ে এই টুটুল পাল নিজের মতো করে আরেকটি এজাহার লিপিবদ্ধ/দায়ের করেন থানায়। এতে করে মামলাটির ভবিষ্যৎ নিয়ে বাদি তসলিমা এখন শঙ্কিত।
টুটুল পাল যে নগদপ্রাপ্তির বিনিময়ে এই কাণ্ডটি করেননি তাও-বা বিশ্বাস করি কী করে? এই ধরনের সেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানে টুটুল পালদের মানায় না।

সোমবার, নভেম্বর ৩০, ২০০৯

ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী লে. কর্নেল (অব.) ডালিমের কানাডা সফর

ঙ্গবন্ধুর খুনি লে. কর্নেল (অব.) শরিফুল হক ডালিম সম্প্রতি কানাডা থেকে ঘুরে গেছেন। তিনি বহন করছেন ব্রিটিশ পাসপোর্ট । এই পাসপোর্টের সুবাদেই ডালিম ঘুরে বেড়াচ্ছেন নানা দেশ। এ কারণেই যে-কোনো সময় যে-কোনো দেশ ভ্রমণ করতে পারছেন।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলহত্যার পর ৪ নভেম্বর ডালিমসহ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের একটি বিশেষ বিমানে রেঙ্গুন হয়ে ব্যাংকক পাঠানো হয়। সেখান থেকে পাকিস্তান সরকারের দেওয়া একটি বিমানে তাঁদের লিবিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৭৬ সালের ৮ জুন এই ১২ জনকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্বদানকারী লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান ও লে. কর্নেল খন্দকার আব্দুর রশিদ চাকরিতে যোগ দিতে রাজি হননি। তাঁরা সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেন। এঁদের মধ্যে লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিমকে চীন দূতাবাসে প্রথম সচিব, লে. কর্নেল আজিজ পাশাকে আর্জেন্টিনায় প্রথম সচিব, মেজর একেএম মহিউদ্দিন আহমেদকে আলজেরিয়ায় প্রথম সচিব, মেজর বজলুল হুদাকে পাকিস্তানে দ্বিতীয় সচিব, লে. কর্নেল শাহরিয়ার রশিদকে ইন্দোনেশিয়ায় দ্বিতীয় সচিব, মেজর রাশেদ চৌধুরীকে সৌদি আরবে দ্বিতীয় সচিব, মেজর নূর চৌধুরীকে ইরানে দ্বিতীয় সচিব, মেজর শরিফুল হোসেনকে কুয়েতে দ্বিতীয় সচিব, কর্নেল কিসমত হাশেমকে আবুধাবিতে তৃতীয় সচিব, লে. খায়রুজ্জামানকে মিসরে তৃতীয় সচিব, লে. নাজমুল হোসেনকে কানাডায় তৃতীয় সচিব এবং ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদকে সেনেগালে তৃতীয় সচিব হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পোল্যান্ডে ডালিমকে একই পদে নিয়োগ দিলেও সেদেশের সরকার তাঁকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়।
পরবর্তীতে এরশাদ সরকার ডালিমকে বেইজিঙে নিয়োগ দিতে গিয়ে না পেরে পরে হংকঙে ভারপ্রাপ্ত মিশন প্রধান হিসাবে নিয়োগ দেন।

বিস্তারিত পড়ুন এখানে।

শনিবার, নভেম্বর ২৮, ২০০৯

আমার পাঁচখানা কবিতা


পাশাপাশি, না মুখোমুখি?

 

রক্ত কিংবা নৃতাত্ত্বিকসূত্রে
তুমি আমার নিকটজন বই কী
তবে আমার আত্মার আত্মীয় সেই
মনন আর জীবনাচরণে যার অবস্থান উত্তরে
তাই বলি, ভেবে দ্যাখো
সাম্য ও প্রগতির মানদণ্ডে
তোমার যাপিত জীবন তোমাকে কোন শিবিরে দাঁড় করায়
শোষক, না শোষিতের?
অতএব, দেখতে আমার মতো হলেও
তারা সবাই আমার স্বজন নয়
কিংবা অন্যরকম দেখালেও
চেতনায় তারা সবাই দূরের নয়


 

কাঙ্ক্ষিত মধ্যাহ্ন

 

ইংরেজের জানালা দিয়েও নয়
বাঙালির ভেন্টিলেটার দিয়ে তো নয়ই
কেবল অগ্রজের কলম দিয়েই আমি দেখি
আমার পিতার সমস্ত কিছু
তার প্রতিকৃতির উপর ওই আবরণ
কুয়াশার নয়, নিরেট কালো বস্ত্র
জননীকে কণ্ঠে ধারণ করে
‘ম্রাউক্উ-ওয়েথালি-ধাঞাওয়াডি’-তে আমি
বিচরণ করি প্রতিনিয়ত
এবং এভাবেই আমি পৌঁছে যাব
ঐতিহ্যের রাজপথ দিয়ে
কাঙ্ক্ষিত সেই রৌদ্রোজ্জ্বল মধ্যাহ্নে
[‘ম্রাউক্উ-ওয়েথালি-ধাঞাওয়াডি’: আরাকানের তিন রাজধানীর নাম]

 

বদলায় না দিন

 

বোধের খোরাক ফেরি করি দিনমান
খাই অখাদ্য, উগরাই উপাদেয়
চর্ব্য-চোষ্য-লেহ্য-পেয়
এসব উদরস্থ করে
দৈর্ঘ্য-প্রস্থে সমান তারা
তৃপ্তির ঢেকুর তোলে
অন্যের মাথার উপর
কাঁঠাল ভেঙে খাওয়া তাদের স্বভাব
আমি এবং আমার মতো মানুষদের
দিন যায়, বছর ঘোরে, এভাবে
যুগ অতিক্রান্ত হয়, শতাব্দি এগোয়
তবু বদলায় না দিন

 

পার পাবে না

 

শব্দমালায়
আবরণ নয় আভরণই শ্রেয়
উলঙ্গ মন জন্মদিনের পোশাক-অধম
ওদের জাগতে দাও
সুরমা পরা চিকচিকে কালো চোখ
জটাধারী ভণ্ডধ্যানী
আর গেরুয়াধারী ভক্ষককুল
পার পাবে না আর

 

তোমাকে

 

পূর্বাহ্ণের পুরোটা সময় কেটেছে আমার শেকড়ের খোঁজে
নষ্ট সময়ের প্রতিকূলযাত্রী যুবকটি
এই মধ্যহ্নে কী চায়, তার চোখে চোখ রেখে
পড়ে দেখলে কী এমন ক্ষতি হত তোমার?
প্রচলিত ধারার বিপ্রতীপ চিন্তার সঙ্গে
তোমার সহাবস্থান কি কোনোদিনও হবে না
এমন-কী সমান্তরালও?
বিচ্ছিন্ন সুখ? আমার চেতনার ব্যবচ্ছেদেও
খুঁজে পাবে না তুমি
মাংসাশীদের কাছে নিজের কদর বাড়াতে চাও
তো ওই রঙিন অ্যাকুরিয়ামই হবে
তোমার সুখের(?) নীড়


পরিচিতি

 

মং হ্লা প্রু পিন্টুর জন্ম ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দের ৬ মার্চ বর্তমান কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের মধুখালি রাখাইন পাড়ায়। তাঁর বাবার নাম স্বর্গীয় আ থোঁই হ্রী (মাস্টার), মায়ের নাম স্বর্গীয়া চিং ওয়ান প্রু। তিনি লেখালেখি শুরু করেন উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময়। প্রথম কর্মজীবনে তিনি বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন (১৯৯০ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত), পরে (১৯৯৯) শিক্ষকতায় চলে আসেন। তিনি বর্তমানে কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলা সদরে অবস্থিত রামু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক হিসাবে কর্মরত আছেন।

বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, না উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়?

ইংরেজিতে লেখা হয় ... Girls' High School
কিন্তু বাংলায় লিখতে গিয়ে
কেউ লেখে ... বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
আর কেউ লেখে ... উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়
আপনার আশেপাশের মাধ্যমিক বিদ্যালয় (যেখানে কেবল বালিকারাই পড়ে) গুলোর সাইনবোর্ড-এর দিকে তাকালে এর সত্যতা মিলবে।

আমার মতে প্রথমটাই (... বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়) সঠিক। যেহেতু ইংরেজি Primary School, High School এবং College এর বাংলারূপ যথাক্রমে প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয় এবং মহাবিদ্যালয়। তাই Girls' High School এবং Girls' College এর বাংলারূপ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং বালিকা মহাবিদ্যালয়ই হবে।

এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা শিক্ষা অধিদফতর থেকে পরিপত্র জারি করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সঠিকটাকে ব্যবহার করতে আদেশ / নির্দেশ দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

আপনারা কী বলেন?

বুধবার, নভেম্বর ২৫, ২০০৯

'হ্যালো, স্যার আপনার মতামত প্রয়োজন'

হ্যালো, স্যার আপনার মতামত প্রয়োজন... ২০০৫ সালের আগস্ট মাসের এক মধ্যরাতে তৎকালীন সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মো. সহিদুজ্জামানের মুঠোফোনে এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এলাকার জনৈক সন্ত্রাসীকে ক্রস ফায়ারে দেওয়ার আগে উপরের সংলাপটি বলেন। সিবিএন র আজকের সংখ্যায় তাঁর অনিয়মিত কলাম নানা মুনির নানা মত র ১৮ পর্বে সাবেক সাংসদ এই তথ্যটি প্রকাশ করেন। বিস্তারিত পড়ুন নীচের লিংকে---
Click This Link

শুক্রবার, নভেম্বর ২০, ২০০৯

হাইকোর্টের রায় বহাল, ফাঁসি ১২ জনেরই

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার ঐতিহাসিক রায়ে মৃতু্যদণ্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দী পাঁচ আসামির আপীল নাকচ করে দিয়েছে আপীল বিভাগ। এর ফলে হাইকোর্টের দেয়া ১২ আসামির মৃতু্যদণ্ড বহাল রেখেছে আদালত। আপীল বিভাগ যে পাঁচ আসামির আবেদন নাকচ করেছে তারা হলো, লে. কর্নেল (বরখাস্ত) সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল (অব) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মেজর (অব) বজলুল হুদা, লে. কর্নেল (অব) মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), লে. কর্নেল (অব) একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার)।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে বাঙালী জাতি পেল এই ঐতিহাসিক রায়ের ঘোষণা। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা। আপীল বিভাগের ১ নম্বর বিচারকক্ষ আইনজীবী, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদসহ গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনে ভর্তি। সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে তখন পিনপতন নিস্তব্ধতা। শুধু অপেক্ষার পালা। আইনজীবী এবং সাংবাদিকদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বেড়ে যাচ্ছে। ঘড়ির কাঁটা ১১টা থেকে সরে আস্তে আস্তে ১১টা ৪৫ মিনেটে এসেছে। তখনই বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বে বিচারপতি মো. আব্দুল আজিজ, বিচারপতি বিজন কুমার দাস (বিকে দাস), বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন এবং বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এসকে সিনহা) বিচারকক্ষে এসে নিজ নিজ আসনে বসেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারের আপীল বিভাগের বেঞ্চ প্রধান মোঃ তাফাজ্জাল ইসলাম গুরুগম্ভীরভাবে রায় ঘোষণা শুরু করেন। উদ্বেগ ও নীরবতার অবসান ঘটিয়ে বিচারপতি তাফাজ্জাল ইসলাম ঘোষণা করলেন পাঁচ আসামির আপীল না মঞ্জুর করা হলো। এর ফলে হাইকোর্টের দেয়া ১২ আসামির মৃতু্যদণ্ড বহাল থাকল। এই রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে অবসান হলো বাঙালী জাতির এক দীর্ঘ প্রতীক্ষার। পেঁৗছল বাঙালী ইতিহাসের একটি যুগের দ্বারপ্রান্তে। মৃতু্যদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি কারাগারে আটক রয়েছে। অন্যদিকে ৬ আসামি পলাতক রয়েছে। এরা হলো লে. কর্নেল (অব) খোন্দকার আব্দুর রশিদ, লে. কর্নেল (অব) শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল (অব) এ এম রাশেদ চৌধুরী, লে. কর্নেল (অব) এন এইচএমবি নূর চৌধুরী, ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ, রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন। লে. কর্নেল (অব) আব্দুল আজিজ পাশা ২০০১ সালে জিম্বাবুইয়েতে মারা যায়।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে বিচারপতিরা এজলাসে বসেন, বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলাম ১১টা ৪৬ মিনিটে রায় পড়া শুরু করে ১১টা ৫০ মিনিটে শেষ করেন। রায়ে বলা হয় "আমাদের অভিমত হলো হাইকোর্টের তৃতীয় বিচারপতি ছয় আসামির বিষয়ে নি্#৬৩৭৪৩;ত্তি করে কোন ভুল করেননি। বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট বিভাগ মামলা দায়েরের বিলম্বের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। ব্যাখ্যা গ্রহণ করে আদালত কোন ভুল করেননি।" রায়ে আরও বলা হয় "আসামিরা ঘটনার সময় একটিভ সার্ভিসে ছিলেন না। তাই সেনা আইনে বিচার না করে সাধারণ আইনে বিচার করায় আইনী কোন ভুল ছিল না।" বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের জন্য ষড়যন্ত্র হয়েছিল বিদ্রোহের জন্য। রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। এসব কারণে আসামিদের আপীল খারিজ করা হল।
আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ রায় ঘোষণার পর সরকার পক্ষের প্রধান কেঁৗসুলি আনিসুল হক তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, জাতি ন্যায়বিচার পেয়েছে। আসামি পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, হাইকোর্টে পুরো রায় বহাল রয়েছে। পলাতক ৭ জনের কেউ ফিরে এলে বিলম্ব মার্জনার আবেদন করতে পারবে। পরে সরকার ও আসামি পক্ষ সাংবাদিকদের ব্রিফিং প্রদান করেন। সকাল থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়। বিচারকক্ষে আইনজীবী ও সাংবাদিকদের সকাল ১০টার সময় ঢুকতে দেয়া হয়। রাজনীতিবিদদের মধ্যে এসেছিলেন আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবীর নানক, বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ। আইনজীবীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান কেঁৗসুলি এ্যাডভোকেট আনিসুল হক, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, এএফএম মেজবাহউদ্দিন, আজমালুর হোসেন কিউসি, তৌফিক নেওয়াজ, শ ম রেজাউল করিম, জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম, মোঃ আবু জাফর সিদ্দিকী, রবিউল আলম বুদু, তাজউদ্দিন মেহেদী, নুরুল ইসলাম সুজন, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, মোশারফ হোসেন কাজল, তৌফিক করীম, ইমতিয়াজ উদ্দিন আসিফ, এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, আব্দুল মতিন খসরু, বাদী আ ফ ম মহিতুল ইসলাম ও আইও আব্দুল কাহার আকন্দ।
অন্যদিকে এ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহাবুবে আলম, অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল একেএম জহিরুল হক, ডিএজি এএস মো. আব্দুল মোবিন, ডিএজি মো. মোতাহার হোসেন সাজু, এএজি মাহফুজা বেগম, এএজি মো. একরামুল হক, এএজি খোন্দকার দিলারুজ্জামান, এএজি ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পি, এএজি সর্দার মো. রাসেদ জাহাঙ্গীর ও এএজি এবিএম আলতাফ হোসেন। আসামি পক্ষে ছিলেন আব্দুর রেজ্জাক খান ও ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন।
বহু প্রতীক্ষিত এ রায় শোনার জন্য গোটা জাতি ছিল উন্মুখ। শত শত আইনজীবী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ আদালত প্রাঙ্গণে আসেন। লাখ লাখ জনতা টেলিভিশন ও বেতারে সরাসরি সম্প্রচার শোনেন। সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে রায় ঘোষণার পরই আদালত প্রাঙ্গণে মৃতু্যদণ্ড কার্যকর করার পক্ষে স্লোগান দেয়া হয়। এরপর আইনজীবী সম্মেলনকক্ষে ব্রিফিং প্রদান করেন সরকার ও আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। নিম্নে তা তুলে ধরা হল:

এ্যাটর্নি জেনারেল
এ্যাটর্নি জেনারেল মাহাবুবে আলম ব্রিফিংয়ে বলেন, ১৯ নবেম্বর বাঙালী জাতির জীবনে একটি ঐতিহাসিক দিন। এই ঐতিহাসিক দিনে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় ঘোষণা হলো। এটি মানব ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ রায় হিসেবে পরিচিত হবে। মামলায় আসামিদের সমস্ত স্বচ্ছতা দেয়া হয়েছে। মামলা যাতে না করা হয়, সে কারণে মোশতাক আহমেদ ইনডেমনিটি বিল জারি করেছিল। জিয়াউর রহমান, এরশাদ সরকার ইনডেমনিটি বহাল রেখেছিলেন। '৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় না আসলে ঐ কালো অধ্যায় বাতিল হতো না। এই রায়ের মধ্য দিয়ে জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে।
মাহবুবে আলম বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা দায়েরের জন্য বাদী মহিতুল ইসলামকে তাঁর সাহসিকতার জন্য ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে তিনি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আব্দুল কাহার আকন্দকেও ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এই মামলা বিলম্বিত করার জন্য আসামি পক্ষ বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়েছে। প্রথমে তারা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ দিয়ে আদালতকে চ্যালেঞ্জ করে। এতে তারা আদালতে হেরে যায়। আপীল বিভাগেও তারা হেরে যায় বলে তিনি উল্লেখ করেন। মাহবুবে আলম আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় সেশন আদালতে ১৫০ দিন, হাইকোর্টে ৬৩ দিন, তৃতীয় বেঞ্চে ২৫ দিন শুনানি হয়েছে। এতে ১২ জনের আদেশ বহাল থাকে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ৪ জন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি দেশে ছিল। একজনকে বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনা হয়। তিনি বলেন, তারা বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, সুলতানা কামাল, শেখ নাসের, শেখ মনি, আব্দুর রব সেরনিয়াবাতকে হত্যা করেছে। তাদের ফিরে পাব না। এই রায়ে জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে।

আনিসুল হক
সরকারপক্ষের প্রধান কেঁৗশুলি আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আজকে আমরা শেষ দরজায় এসে বিচার পেয়েছি। আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ৫টি বিবেচ্য বিষয় শুনানি করেছিল, তার রায় দিয়েছেন। অন্যান্য সময় যে রায় দেয়া হয়, তার ব্যতিক্রম ছিল এটি। আগে শুধু অর্ডার প্রসেসিং হতো। আজকে রায়ের বেশ কিছু অংশ পড়ে শোনানো হয়েছে। আদালত আসামিদের বক্তব্য নাকচ করে দিয়েছে। তিনি তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, জাতি ৩৪ বছর অপেক্ষার পর বিচার পেয়েছে। এ রায়ের পর শুকরিয়া আদায় করছি। যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের জন্য মাগফিরাত কামনা করছি। অনেক দিন পর জাতি ন্যায় বিচার পেয়েছে।

ফজলে নূর তাপস
বঙ্গবন্ধুর দৌহিদ্র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ২৪ বছর সংগ্রাম করতে হয়েছিল স্বাধীনতা পাবার জন্য। আজকে লজ্জা লাগে ৩৪ বছর দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার পাওয়ার জন্য। আজ গর্ববোধ করি স্বাধীন দেশে সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীমকোর্ট মাইলফলক রায় দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছে। হাইকোর্টে মামলা পরিচালনা করার জন্য সিরাজুল হককে স্মরণ করতেই হয়। তিনি বলেন, '৭৫ সালের ১৯ নবেম্বর মা-বাবা আমার জন্মদিন পালন করতে পারেনি। আজ আমার জন্মদিনে সুপ্রীমকোর্ট রায় দিয়ে সর্বোচ্চ উপহার দিয়েছে। মা-বাবার হত্যার বিচার পেয়েছি। এটি ঐতিহাসিক রায়।

আ. ফ. ম. মোহিতুল ইসলাম
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বাদী আ. ফ. ম. মোহিতুল ইসলাম বলেছেন, আমরা প্রত্যাশিত রায় পেয়েছি। এই দিনটির জন্য অনেক দিন অপেক্ষা করেছি। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও ১৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে পারিনি। আমার ছোট ভাই রাসেল বলেছিল ওরা আমাকে মারবে না তো; আমি বলেছিলাম, না ওরা তোমাকে মারবে না। আমার সেই আশ্বাস ভুল ছিল। খুনীরা শিশু রাসেলকেও রক্ষা করেনি। '৭৬ সালে লালবাগ থানায় এজাহার করতে গেলে থানার এসআই আমার গালে থাপ্পড় মেরে বলে, তুইও মরবি, আমাদেরও মারবি। সময় আসাতে আমি '৯৬-তে মামলা করেছি। দীর্ঘদিন হলেও মামলার খুনীদের বিচার হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ বলেন, ৩৪ বছর পর আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। জাতি আজ কলঙ্কমুক্ত হলো। রায় ঘোষণার পর রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌশলি আনিসুল হক ১৫ আগস্টে বাবা-মা হারানো বঙ্গবন্ধুর নাতি ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে জড়িয়ে কেঁদে ওঠেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর একদল সদস্য ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে হানা দিয়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। নিহত হন বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে রাসেলসহ ২৮ জন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ নবেম্বর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দায়মুক্তি অধ্যাদেশ বাতিল করে। ১৯৯৮ সালের ৮ নবেম্বর বিচারিক আদালত ২০ আসামির মধ্যে ১৫ জনকে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃতু্যদণ্ড প্রদান করে। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপীল ও মৃতু্যদণ্ড নিশ্চিতকরণের শুনানি হয় হাইকোর্টে। হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ দ্বিধাবিভক্ত রায় দেয়। পরে তৃতীয় বেঞ্চ ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল ১২ জনের মৃতু্যদণ্ড অনুমোদন করে রায় দেয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে কারাগারে আটক পাঁচ আসামি আপীল করে। আপীল বিভাগের শুনানি শেষে, বৃহস্পতিবার ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করা হয়। ঐ রায়ে পাঁচ আসামির আপীল নাকচ করে দেয়া হয়। ফলে হাইকোর্টের দেয়া ১২ আসামির মৃতু্যদণ্ড এখন বহাল থাকল।

সেরনিয়াবাত শেখ মণিসহ ২৪ নিহতের মামলা চালু হচ্ছে

৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার সেই রাতে আরও ২৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ৩টি হত্যা মামলা পুনরুজ্জীবিত করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি হত্যা মামলা, বঙ্গবন্ধুর ভগি্নপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত হত্যা মামলা ও মোহাম্মদপুরের কামানের গোলায় হত্যাকাণ্ড_এই ৩টি হত্যা মামলায় ২৪ জন নিহত হয়েছে। জোট সরকারের সময়ে এই মামলাগুলোকে স্থগিত ও প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সর্বোচ্চ আদালতে বিচার অনুষ্ঠিত হলেও সেই রাতে এই ৩ হত্যা মামলায় ২৪ নিহত হওয়ার বিচার আজ অবধি হতে দেয়া হয়নি।
বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে ও ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের পিতা শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মনিকে '৭৫ সালের ১৫ আগস্টে ভোরে হত্যা করা হয়েছে ধানমণ্ডির বাসভবনে। এই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে থানায় মামলা হয়। মামলাটি তদন্তভার দেয়া হয় সিআইডিকে। সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে এই মামলার তদন্তকারী অফিসার নিযুক্ত করা হয়। জোট সরকার মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরও জোট সরকারের প্রত্যাহার করে নেয়া শেখ মনি হত্যা মামলাটি পূর্বাবস্থায়ই রয়ে গেছে। সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার অনুষ্ঠিত হওয়ার পর মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
শেখ মনি হত্যা মামলার তদন্তকারী অফিসার সিআইডির এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে একুশে আগস্টে গ্রেনেড হামলা মামলা সাজানো নাটকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অভিযোগে মামলা হয়েছে। তিনি সিআইডি থেকে ইতোমধ্যেই অবসর নিয়েছেন। তারপর থেকে এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা সর্বোচ্চ আদালতে রায় ঘোষণার পর শেখ মনি হত্যা মামলাটির খোঁজ করা হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধুর ভগি্নপতি সাবেক পানি, সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতসহ ৮ জন নিহত হন মিন্টু রোড্রে তার সরকারী বাসভবনে। সাবেক চীফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর পিতা আবদুর রব সেরনিয়াবাত হত্যা মামলাটি বর্তমানে হাইকোর্টে স্থগিত অবস্থায় আছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত খুনীদের পক্ষে আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতে মামলাটি স্থাগিতাদেশ দিয়ে রাখা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে খুনীদের পক্ষে উচ্চ আদালতে এই স্থাগিতাদেশ হয়।

'৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ভোরে সাবেক মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতের ২৭ নম্বর মিন্টু রোডের সরকারী বাসভবন আক্রমণ করে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার খুনীরাসহ উচ্ছৃক্মখল সেনাসদস্যরা। অস্ত্রের মুখে বাসার ভেতরে ঢুকে বাসার সবাইকে একত্রিত করে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার মেয়ে বেবি সেরনিয়াবাত, ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি চার বছরের শিশু বাবু সেরনিয়াবাত, চাচাত ভাই শহীদ সেরনিয়াবাত, বাসার গৃহপরিচারিকা লক্ষ্মীর মা, কাজের ছেলে পোটকা, আবদুর রহিম খান ওরফে রিন্টু। শিশু বাবু হচ্ছে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে।

'৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর স্ত্রী সাহান আরা বেগম বাদী হয়ে রমনা থানায় মামলা দায়ের করেন। মেজর শাহরিয়ার, মেজর আজিজ পাশা, ক্যাপ্টেন মাজেদ, ক্যাপ্টেন নুরুল হুদাসহ অন্যদের আসামি করা হয়েছে। মামলাটির তদন্ত শেষে '৯৭ সালের ৩০ জুলাই ১৬ সাবেক সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করা হয়। চার্জশীট দাখিলের পর মামলাটি বিচারের জন্য আদালতে যায়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে খুনীদের পক্ষে উচ্চ আদালতে আবেদন জানানোর প্রেক্ষিতে মামলাটি বিচারের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়া হয়।

'৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রমণের সময়ে খুনীদের কামানের গোলা নিক্ষেপ করা হলে তা গিয়ে মোহাম্মদপুরের শের শাহসুরি রোডের ৮ ও ৯ নম্বর বাড়িতে গিয়ে পড়ে। গৃহিণী রোজিয়া বেগম, তার ছোট মেয়ে নাসিমা, হাবিবুর রহমান, আনোয়ারা বেগম-১, আনোয়ারা বেগম-২, ময়ফুল বিবি, সাবেরা বেগম, আবদুল্লাহ্, রফিকুল, সাবিয়া, সাহাবুদ্দিন, আমিনুদ্দিন, কাশেদা ও দুই বছরের শিশু আনোয়ারা মারা যায়। '৯৬ সালের ২৯ নবেম্বর রোজিয়ার স্বামী মোহাম্মদ আলী একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০০১ সালে সিআইডি এই হত্যা মামলাটি তদন্ত করে চার্জশীট দেয়। চার্জশীটে লে. কর্নেল (বরখাস্ত) সৈয়দ ফারুক রহমান, তাহের উদ্দিন ঠাকুরসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয়া হয়। তারপর থেকে এই মামলাটির ন্যায় বিচারের আলোর মুখ দেখতে দেয়া হয়নি।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্তকারী অফিসার সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, শেখ মনি হত্যা মামলার তদন্তভার দেয়া হয়েছিল সিআইডিকে। সিআইডির তদন্তকারী অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছিল সিআইডির এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে। মুন্সি আতিকুর রহমান সিআইডি থেকে অবসরে চলে গেছেন। জোট সরকারের আমলে শেখ মনি হত্যা মামলাটির তদন্ত স্থগিত করে রাখা হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় সর্বোচ্চ আদালতে ঘোষিত হওয়ার পর এখন শেখ মনি হত্যা মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম নতুন করে শুরু করতে আর কোন বাধা নেই।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আইনজীবী এ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন কাজলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আবদুর রব সেরনিয়াবাত হত্যা মামলাটি বর্তমানে হাইকোর্টে স্টে করে রাখা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে খুনীদের পক্ষে আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলাটি স্থগিত করে রাখা হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ে খুনীদের ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখার পর এখন এই মামলাটির স্থগিতাদেশ ভেকেন্ট করার আবেদন করে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিতে হবে।

সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলাপ করে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় সর্বোচ্চ আদালত থেকে ঘোষিত হওয়ার পর '৭৫-এর ১৫ আগস্টের সেই রাতে মোহাম্মদপুরে কামানের গোলায় হত্যাকাণ্ড, শেখ মনি হত্যাকাণ্ড ও আবদুর রব সেরনিয়াবাত_এই ৩ হত্যা মামলার পুনর্তদন্ত ও পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য জীবন

৯২০ সালের ১৭ মার্চ। এই স্বর্ণখচিত দিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম তৎকালীন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে। শেখ লুৎফর রহমান ও মোসাম্মৎ সায়রা বেগম দম্পতির ঘর আলো করে আসা তাদের তৃতীয় সন্তান 'খোকা' একদিন হয়ে উঠলেন বাঙালির জিয়নকাঠির নায়ক।
৭ বছর বয়সে পার্শ্ববর্তী গিমাডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনার শুরু তার। দু'বছর পর গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। পরে মিশনারি স্কুলে; কিন্তু ১২ বছর বয়সে বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হলে পড়াশোনায় সাময়িক বিরতি ঘটে। চার বছর পর আবার স্কুলে ভর্তি। ১৮ বছর বয়সে চাচাতো বোন বেগম ফজিলাতুন্নেসার সঙ্গে বিয়ে হয় তার।
১৯৪০ সালে মুজিব যোগ দেন নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে। এক বছরের জন্য বেঙ্গল মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
১৯৪২ সালে এন্ট্রান্স (এখনকার এসএসসি) পাসের পর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। ওই বছরই তিনি পাকিস্তান আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। পরের বছর মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
১৯৪৬ সালে ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন। পরের বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন।
'সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' বাংলা ভাষা নিয়ে মুসলিম লীগের 'ষড়যন্ত্রের' প্রতিবাদে ১১ মার্চ সাধারণ ধর্মঘট ডাকে। ধর্মঘট পালনকালে সহকর্মীদের সঙ্গে গ্রেফতার হন মুজিব। ছাত্র আন্দোলনের মুখে ১৫ মার্চ তাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সরকার।
ফরিদপুরে কর্ডনপ্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করায় ১১ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরের বছর ২১ জানুয়ারি তিনি মুক্তি পান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা তাদের দাবি আদায়ে ধর্মঘট ঘোষণা করলে মুজিব সমর্থন ও সংহতি প্রকাশ করেন। কর্মচারীদের এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে ২৯ মার্চ কর্তৃপক্ষ তাকে জরিমানা করে। এ নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন মুজিব। ১৯ এপ্রিল উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করা হয়। কারাবন্দি মুজিব এর যুগ সম্পাদক নির্বাচিত হন। জুলাই মাসে মুক্তি পান। মুক্তি পেয়েই খাদ্য সংকটের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। সেপ্টেম্বরে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের দায়ে গ্রেফতার হন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের আগমন উপলক্ষে আওয়ামী মুসলিম লীগের ভুখা মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়ায় ১৪ অক্টোবর তাকে আবার গ্রেফতার করা হয়। এবার প্রায় দু'বছর পাঁচ মাস জেলে আটক থাকেন।
১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি খাজা নাজিমউদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করলে বন্দি অবস্থায় ২১ ফেব্রুয়ারিকে রাজবন্দি মুক্তি এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি দিবস হিসেবে পালনের জন্য সংগ্রাম পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান মুজিব। এ দাবিতে ১৪ ফেব্রুয়ারি জেলখানায় অনশন শুরু করেন তিনি।
২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্রসমাজের মিছিলে গুলি চালায় পুলিশ। গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক ও শফিউর শহীদ হন। মুজিব জেলখানায় এর প্রতিবাদে টানা ১৭ দিন অনশন করেন।
১৯৫৩ সালের ৯ জুলাই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিলে তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৫৪ সালের ১০ মার্চ পাকিস্তান গণপরিষদের নির্বাচনে ২৩৭টি আসনের মধ্যে ২২৩টিই পায় যুক্তফ্রন্ট। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ পায় ১৪৩টি। শেখ মুজিব গোপালগঞ্জের আসনে মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা ওয়াহিদুজ্জামানকে ১৩ হাজার ভোটে পরাজিত করেন।
১৫ মে তিনি প্রাদেশিক সরকারের কৃষি ও বনমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ৩০ মে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা বাতিল করে দেয়। ৩০ মে মুজিব করাচি থেকে ঢাকায় ফেরেন এবং গ্রেফতার হন। ২৩ ডিসেম্বর মুক্তি পান।
১৯৫৫ সালের ৫ জুন মুজিব গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৭ জুন পল্টন ময়দানের জনসভায় আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন দাবি করে ২১ দফা ঘোষণা করে।
দলকে সব ধর্মের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে ২১ অক্টোবর আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিলে দলের নাম থেকে 'মুসলিম' শব্দ প্রত্যাহার করা হয়। মুজিব আবার দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে ১৯৫৭ সালের ৩০ মে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন।
পরের বছরের ৭ অক্টোবর জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করে রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। ১১ অক্টোবর মুজিবকে গ্রেফতার করে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করে আইয়ুব শাহি। প্রায় ১৪ মাস পর মুক্তি দিয়ে আবার জেলগেটে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগের এক সভায় মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ও মুজিব সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মুজিব ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি পেশ করেন। এতে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবি জোরালোভাবে তোলা হয়।
১ মার্চ তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর ৬ দফার পক্ষে জনমত সৃষ্টির জন্য সারাবাংলায় গণসংযোগ সফর শুরু করেন।
১৯৬৬ সালের প্রথম তিন মাসে একবার-দু'বার নয়, মোট আটবার গ্রেফতার হন মুজিব।
১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার তাকে প্রধান আসামি করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। এ মামলার আসামিদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভে ফুঁসে ওঠে গোটা পূর্ববাংলা।
১৯৬৯ সালের ৫ জানুয়ারি ৬ দফাসহ ১১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। পরিষদ আগরতলা মামলা প্রত্যাহার ও মামলায় আটকদের মুক্তি দাবিতে আন্দোলন শুরু করে যা, গণআন্দোলনে পরিণত হয়।
১৪৪ ধারা ও কারফিউ ভঙ্গ, পুলিশ-ইপিআরের গুলি আর বহু হতাহতের মধ্যদিয়ে আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে আইয়ুব সরকার ১ ফেব্রুয়ারি গোলটেবিল বৈঠকের আহ্বান জানায়।
২২ ফেব্রুয়ারি চাপের মুখে সরকার আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে মুজিবসহ আসামিদের মুক্তি দেয়।
২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে শেখ মুজিবকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধি দেওয়া হয়। এ সময় তিনি ছাত্রসমাজের ১১ দফা দাবির প্রতি সমর্থন জানান।
২৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু রাওয়ালপিন্ডিতে আইয়ুব খানের গোলটেবিল বৈঠকে বলেন, গণঅসন্তোষ নিরসনে ৬ দফা ও ১১ দফার ভিত্তিতে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন দেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
পাকিস্তানি শাসকরা বঙ্গবন্ধুর দাবি অগ্রাহ্য করলে ১৩ মার্চ তিনি বৈঠক ত্যাগ করে ঢাকা চলে আসেন।
২৫ মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া খান সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হন।
১৯৭০ সালের ৬ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু আবার আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
৭ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩১০টির মধ্যে ৩০৫টি আসন পায় দলটি।
১৩ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন; কিন্তু ১ মার্চ তিনি অনির্দিষ্টকালের জন্য অধিবেশন স্থগিতের ঘোষণা দিলে সারাবাংলায় প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। আওয়ামী লীগ ২ মার্চ দেশব্যাপী হরতাল ডাকে। হরতালের পরদিন বঙ্গবন্ধু অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান।
৭ মার্চ রেসকোর্সের জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু অনিবার্য হয়ে ওঠা স্বাধীনতা যুদ্ধের ইঙ্গিত দিয়ে ঘোষণা দেন_ 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।'
১৬ মার্চ ঢাকায় ক্ষমতা হস্তান্তর প্রশ্নে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক শুরু হয়। আলোচনার জন্য ভুট্টোও ঢাকায় আসেন। ২৪ মার্চ পর্যন্ত ইয়াহিয়া-মুজিব-ভুট্টোর আলোচনা হয়।
২৫ মার্চ আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর সন্ধ্যায় ইয়াহিয়া গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন। বলা হয়ে থাকে, এ সময় পাকিস্তানি বাহিনী আসলে দমন অভিযানের প্রস্তুতি নেয়। ২৫ মার্চ মধ্যরাতেই নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী।
বঙ্গবন্ধু ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বন্দি হওয়ার আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে একটি বার্তা পাঠাতে সক্ষম হন। এতে তিনি বলেন, 'সম্ভবত এটাই আমার শেষ বার্তা। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।' তিনি সবাইকে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করার আহ্বান জানান।
২৬ মার্চ চট্টগ্রামে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এমএ হান্নান বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন।
এরপর ২৭ মার্চ বাঙালি সেনা কর্মকর্তা মেজর জিয়াউর রহমান ঘোষণাপত্রটি কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে একাধিকবার পাঠ করেন।
২৬ মার্চ ইয়াহিয়া খান আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধুকে দেশদ্রোহী আখ্যা দেন এবং তাকে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়।
১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি করে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। এতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে (মুজিবনগর) বাংলাদেশ সরকারের শপথ হয়।
নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশকে সহায়তাকারী ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও বাংলাদেশি মুক্তিবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নতিস্বীকার করে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয়। বঙ্গবন্ধু লন্ডন ও দিলি্ল হয়ে ১০ জানুয়ারি ঢাকায় পেঁৗছলে তাকে অবিস্মরণীয় সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৭৩ সালে নতুন সংসদের প্রথম নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পায় ২৯৩টি। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ, সিপিবি ও ন্যাপের সমন্বয়ে ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়।
যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ দুর্নীতি, আইন-শৃঙ্খলার অবনতিসহ নানা ধরনের সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়ে।
১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।
১৯৭৫ সালের ৬ জুন বঙ্গবন্ধু এক বিতর্কিত উদ্যাগে সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) নামে একটি নতুন দল গঠন করেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, দেশে বিদ্যমান পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য তাকে এটি করতে হচ্ছে এবং এটি দেশের জন্য ভালো হবে।

ইনডেমনিটির আদ্যোপান্ত

৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করেন। সেদিন ছিল শুক্রবার। ‘দি বাংলাদেশ গেজেট, পাবলিশড বাই অথরিটি’ লেখা অধ্যাদেশটিতে খন্দকার মোশতাকের স্বাক্ষর আছে। মোশতাকের স্বাক্ষরের পর আধ্যাদেশে তত্কালীন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এইচ রহমানের স্বাক্ষর আছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর মোশতাক নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেন।
অধ্যাদেশটিতে দুটি ভাগ আছে। প্রথম অংশে বলা হয়েছে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বলবত্ আইনের পরিপন্থী যা কিছুই ঘটুক না কেন, এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টসহ কোনো আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের বা কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না।
দ্বিতীয় অংশে বলা আছে, রাষ্ট্রপতি উল্লিখিত ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে যাদের প্রত্যয়ন করবেন তাদের দায়মুক্তি দেওয়া হলো। অর্থাত্ তাদের বিরুদ্ধে কোনো আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের বা কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না।
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রকারী হিসাবে আবিভূর্ত হন। সে সময় বিচারপতি সায়েম রাষ্ট্রপতি ছিলেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ এপ্রিল জনাব সায়েম জেনারেল জিয়াউর রহমানের কাছে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল সায়েম রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং জিয়া রাষ্ট্রপতি হন। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সামরিক আইনের অধীনে দেশে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি দুই-তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশসহ চার বছরে সামরিক আইনের আওতায় সব অধ্যাদেশ, ঘোষণাকে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে আইনি বৈধতা দেওয়া হয়। সংশোধনীটি পাস হয় ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল। সংসদে উত্থাপিত আইনটির নাম ছিল ‘সংবিধান (পঞ্চম সংশোধনী) আইন, ১৯৭৯’। এটি এখন সংবিধানের চতুর্থ তফসিলের ১৮ অনুচ্ছেদে সংযুক্ত আছে।
এতে বলা হয়েছে, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হইতে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল তারিখের (উভয় দিনসহ) মধ্যে প্রণীত সকল ফরমান, ফরমান আদেশ, সামরিক আইন প্রবিধান, সামরিক আইন আদেশ, ও অন্যান্য আইন, এবং উক্ত মেয়াদের মধ্যে অনুরূপ কোনো ফরমান দ্বারা এই সংবিধানের যে সকল সংশোধন, সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন ও বিলোপসাধন করা হইয়াছে তাহা, এবং অনুরূপ কোনো ফরমান, সামরিক আইন প্রবিধান, সামরিক আইন আদেশ বা অন্য কোনো আইন হইতে আহরিত বা আহরিত বলিয়া বিবেচিত ক্ষমতাবলে, অথবা অনুরূপ কোনো ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে গিয়া বা অনুরূপ বিবেচনায় কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত কোনো আদেশ কিংবা প্রদত্ত কোনো দণ্ডাদেশ কার্যকর বা পালন করিবার জন্য উক্ত মেয়াদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত আদেশ, কৃত কাজকর্ম, গৃহীত ব্যবস্থা বা কার্যধারাসমূহ, অথবা প্রণীত, কৃত, বা গৃহীত বলিয়া বিবেচিত আদেশ, কাজকর্ম, ব্যবস্থা বা কার্যধারাসমূহ এতদ্বারা অনুমোদিত ও সমর্থিত হইল এবং ঐ সকল আদেশ, কাজকর্ম, ব্যবস্থা বা কার্যধারাসমূহ বৈধভাবে প্রণীত, কৃত বা গৃহীত হইয়াছে বলিয়া ঘোষিত হইল, এবং তত্সম্পর্কে কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা কর্তৃপক্ষের নিকট কোনো কারণেই কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।’
সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে বৈধতা দেওয়ায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অপরাধীরা দায়মুক্তি পেয়ে যায়। মোশতাকের জারি করা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বৈধতা দেওয়া না হলে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল সামরিক আইন প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গেই ১৫ আগস্টের খুনিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেত। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিচারপতি আবদুস সাত্তার, এইচ এম এরশাদ এবং ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলেও ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি বাতিল বা রহিত করেননি। ফলে দায়মুক্তি পেয়ে খুনিরা ১৫ আগস্টের হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা প্রকাশ্যেই বলে বেড়াত।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দীর্ঘ ২১ বছর আন্দোলন-সংগ্রাম করে ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়। ওই বছর ২৩ জুন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা জার্মানীতে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করার আইনি বাধা অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ (রহিতকরণ) বিল, ১৯৯৬ সালে সপ্তম সংসদে উত্থাপন করা হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর আইনটি সংসদে পাস হয়। ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর এটি পরিপূর্ণভাবে আইনে পরিণত হয়। ফলে মোশতাকের জারি করা এবং জিয়াউর রহমানের সময় বৈধতা পাওয়া ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি বিলুপ্ত বলে গণ্য হয়। এরপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা দায়ের করা হয় এবং আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়।