১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের সঙ্গে নিহত হন। এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকে এ পর্যন্ত এই হত্যা মামলার কালপঞ্জি তুলে ধরা হল:
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের সঙ্গে শেষ রাতে এক অভ্যুত্থানে নিহত হন। এই অভ্যুত্থান স্বাধীনতা উত্তর আওয়ামী লীগ সরকারকেও উৎখাত করে।
১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর- স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট খোন্দকার মোস্তাক আহমদ বিচারের হাত থেকে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের রক্ষা করতে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করেন। পরবর্তী বিএনপি সরকার ১৯৭৭ সালে ইনডেমনিটিকে আইন হিসাবে অনুমোদন করে।
১৯৯৬ সালের ২৩ জুন- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সুদীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসে।
১৯৯৬ সালের ১৪ আগস্ট- বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তিন প্রধান আসামী বরখাস্তকৃত লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে গ্রেফতার করা হয়।
১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর- রাষ্ট্রপতির আবাসিক একান্ত সহকারি (পিএ) এএফএম মোহিতুল ইসলাম ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সংঘটিত নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় থানায় একটি এফআইআর করেন।
১৯৯৬ সালের ৩ অক্টোবর- বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং তারা এ মামলার তদন্ত শুরু করে।
১৯৯৬ সালের ১৪ নভেম্বর- খুনীদের বিচারের হাতে ন্যস্ত করতে পার্লামেন্টে ইনডেমিনিটি আইন বাতিল।
১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি- সিআইডি এই মামলায় ২০ জনকে অভিযুক্ত করে মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।
১৯৯৭ সালের ১ মার্চ- ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আইনগত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পর বিচার কার্যের জন্য মামলাটি ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠান।
১৯৯৭ সালের ১২ মার্চ- ছয় আসামীর উপস্থিতিতে আদালতে বিচার শুরু হয়।
১৯৯৭ সালের ২০ মার্চ- সরকার ১৪ জন পলাতক আসামীর পক্ষে মামলা পরিচালনায় ১৪ জন আইনজীবী নিয়োগ করে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করায় ওই ১৪ আসামী বিদেশে পালিয়ে যায়।
১৯৯৭ সালের ৬ এপ্রিল- বিচারিক আদালতে অভিযোগের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৯৭ সালের ৭ এপ্রিল- অভিযুক্তদের অপরাধী হিসাবে গণ্য করা হয়।
১৯৯৭ সালের ২১ এপ্রিল- বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পলাতক আসামী কর্নেল রশিদের স্ত্রী জোবাইদা রশিদের আইনজীবী হাইকোর্টে বিচারিক আদালতের বিরুদ্ধে অনাস্থা পেশ করলে শুনানির প্রথম দিনেই আকস্মিকভাবে বিচারকার্য মুলতবি হয়ে যায়।
১৯৯৭ সালের ২৯ এপ্রিল- আসামী পক্ষের আপিল হাইকোর্টে খারিজ হওয়ার পর পুনরায় মামলার কার্যক্রম শুরু।
১৯৯৭ সালের ২৯ এপ্রিল- এই মামলার অপর এক আসামীর কৌসুলি ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের কাছে অস্থায়ী বিচারিক আদালত গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করায় মামলাটি পুনরায় শুরু হওয়ার পরপরই আবারও স্থগিত হয়ে যায়।
১৯৯৭ সালের ৩০ এপ্রিল- হাইকোর্ট অস্থায়ী বিচারিক আদালত গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা আবেদনটি নাকচ করেন।
১৯৯৭ সালের ৪ মে- এই মামলার আসামী জোবাইদা রশিদের আইনজীবী মামলার প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য সময়ের আবেদন করলে হাই কোর্ট এক মাসের জন্য বিচারকার্য স্থগিত ঘোষণা করে।
১৯৯৭ সালের ১৯ জুন- মামলাটি পুনরায় শুরু হওয়ার পরপরই আসামী জোবাইদার আইনজীবী মামলায় তার মক্কেলকে জড়িত করার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করলে তৃতীয়বারের মতো এর কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়।
১৯৯৭ সালের ৬ জুলাই- ১৯ জনকে অভিযুক্ত করে মামলাটি পুনরায় শুরু হয়। জোবাইদাকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ থেকে রেহাই দেওয়া হয়।
১৯৯৭ সালের ৬ জুলাই- প্রধান স্বাক্ষী মোহিতুল ইসলাম আদালতে স্বাক্ষ্য প্রদান করেন।
১৯৯৮ সালের ২ মার্চ- সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ইনডেমনিটি আইন বাতিলের বিরুদ্ধে উত্থাপিত একটি আপিল সুদীর্ঘ ১৫ দিনের শুনানির পর খারিজ করেন। এর ফলে খুনিদের বিচার করার ক্ষেত্রে সকল বাধা অপসারিত হয়।
১৯৯৮ সালের ৯ জুলাই- বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পলাতক আসামী মেজর বজলুল হুদাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ থাইল্যান্ডের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। যে দু’জন আসামীর বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর উপর গুলি চালানোর অভিযোগ রয়েছে মেজর বজলুল হুদা তাদের অন্যতম।
১৯৯৮ সালের ২১ জুলাই- তদন্তকারী কর্মকর্তা আবুল কাহার আকন্দের স্বাক্ষ্য গ্রহণের মধ্যদিয়ে আদালতে ৭৪ জন স্বাক্ষীর মধ্যে ৬১ জনকে জেরা সম্পন্ন হয়।
১৯৯৮ সালের ৫ আগস্ট- স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলে অভিযুক্তরা নিজেদের নিরপরাধ দাবি করেন।
১৯৯৮ সালের ১২ আগস্ট- প্রধান সরকারি কৌসুলি সিরাজুল হকের বক্তব্যের পর রাষ্ট্র ও আসামী পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে যুক্তিতর্ক শুরু হয়।
২০০০ সালের ২৪ আগস্ট- হাইকোর্টে একই সঙ্গে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হয়।
১৯৯৮ সালের ১৩ অক্টোবর- দু’পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্কের মধ্য দিয়ে ১৪৬ তম কার্যদিবসে ১৭ মাসের বিচার কার্যক্রম শেষ হয়।
১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর- মামলার রায়ে বিচারক কাজী গোলাম রসুল ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন।
১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর- বরখাস্তকৃত মেজর বজলুল হুদাকে বিমান বাহিনীর একটি বিমানযোগে থাইল্যাণ্ডের কারাগার থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর- হাই কোর্ট বেঞ্চ ২৪ দিনের শুনানি শেষে বিভক্ত রায় প্রদান করেন। বিচারক এম রুহুল আমিন অভিযুক্ত ১৫ আসামীর মাঝে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। কিন্তু অপর বিচারক এবিএম খায়রুল হক অভিযুক্ত ১৫ জনকেই সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করেন।
২০০১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি- বিভক্ত রায় প্রদানের ফলে মামলাটির ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি দ্বিতীয় বেঞ্চের তৃতীয় বিচারকের কাছে স্থানান্তরের প্রয়োজন দেখা দেওয়ায় এর শুনানি আরেকটি উচ্চ আদালতে শুরু হয়।
২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল- তৃতীয় বিচারক মোহাম্মদ ফজলুল করিম ২৫ দিন শুনানির পর অভিযুক্ত ১২ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ নিশ্চিত করেন।
২০০৭ সালের ১৮ জুন- যুক্তরাষ্ট্র সাবেক লে. কর্নেল একেএম মহিউদ্দিনকে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেয়।
২০০৭ সালের ২৩ আগস্ট- রাষ্ট্রপক্ষের মুখ্য আইনজীবী আনিসুল হক সুপ্রিম কোর্টে সংক্ষিপ্ত বিবৃতি প্রদান করেন।
২০০৭ সালের ২৩ আগস্ট- আপিল বিভাগের তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ ২৭ দিনের শুনানি শেষে ৫ আসামীকে নিয়মিত আপিল করার অনুমতিদানের লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন।
২০০৯ সালের ২৪ আগস্ট- আপিল বিভাগ ৫ অক্টোবর আপিল শুনানি শুরুর তারিখ নির্ধারণ করেন।
২০০৯ সালের ৫ অক্টোবর- মামলার চূড়ান্ত শুনানি আপিল বিভাগে শুরু হয়।
২০০৯ সালের ১২ নভেম্বর- ২৯ দিনের শুনানির পর চূড়ান্ত আপিল শুনানি শেষ হয় এবং আদালত ১৯ নভেম্বর রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেন।
২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর- বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামীর দায়ের করা আপিল আবেদন খারিজ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন