শনিবার, নভেম্বর ২৮, ২০০৯

আমার পাঁচখানা কবিতা


পাশাপাশি, না মুখোমুখি?

 

রক্ত কিংবা নৃতাত্ত্বিকসূত্রে
তুমি আমার নিকটজন বই কী
তবে আমার আত্মার আত্মীয় সেই
মনন আর জীবনাচরণে যার অবস্থান উত্তরে
তাই বলি, ভেবে দ্যাখো
সাম্য ও প্রগতির মানদণ্ডে
তোমার যাপিত জীবন তোমাকে কোন শিবিরে দাঁড় করায়
শোষক, না শোষিতের?
অতএব, দেখতে আমার মতো হলেও
তারা সবাই আমার স্বজন নয়
কিংবা অন্যরকম দেখালেও
চেতনায় তারা সবাই দূরের নয়


 

কাঙ্ক্ষিত মধ্যাহ্ন

 

ইংরেজের জানালা দিয়েও নয়
বাঙালির ভেন্টিলেটার দিয়ে তো নয়ই
কেবল অগ্রজের কলম দিয়েই আমি দেখি
আমার পিতার সমস্ত কিছু
তার প্রতিকৃতির উপর ওই আবরণ
কুয়াশার নয়, নিরেট কালো বস্ত্র
জননীকে কণ্ঠে ধারণ করে
‘ম্রাউক্উ-ওয়েথালি-ধাঞাওয়াডি’-তে আমি
বিচরণ করি প্রতিনিয়ত
এবং এভাবেই আমি পৌঁছে যাব
ঐতিহ্যের রাজপথ দিয়ে
কাঙ্ক্ষিত সেই রৌদ্রোজ্জ্বল মধ্যাহ্নে
[‘ম্রাউক্উ-ওয়েথালি-ধাঞাওয়াডি’: আরাকানের তিন রাজধানীর নাম]

 

বদলায় না দিন

 

বোধের খোরাক ফেরি করি দিনমান
খাই অখাদ্য, উগরাই উপাদেয়
চর্ব্য-চোষ্য-লেহ্য-পেয়
এসব উদরস্থ করে
দৈর্ঘ্য-প্রস্থে সমান তারা
তৃপ্তির ঢেকুর তোলে
অন্যের মাথার উপর
কাঁঠাল ভেঙে খাওয়া তাদের স্বভাব
আমি এবং আমার মতো মানুষদের
দিন যায়, বছর ঘোরে, এভাবে
যুগ অতিক্রান্ত হয়, শতাব্দি এগোয়
তবু বদলায় না দিন

 

পার পাবে না

 

শব্দমালায়
আবরণ নয় আভরণই শ্রেয়
উলঙ্গ মন জন্মদিনের পোশাক-অধম
ওদের জাগতে দাও
সুরমা পরা চিকচিকে কালো চোখ
জটাধারী ভণ্ডধ্যানী
আর গেরুয়াধারী ভক্ষককুল
পার পাবে না আর

 

তোমাকে

 

পূর্বাহ্ণের পুরোটা সময় কেটেছে আমার শেকড়ের খোঁজে
নষ্ট সময়ের প্রতিকূলযাত্রী যুবকটি
এই মধ্যহ্নে কী চায়, তার চোখে চোখ রেখে
পড়ে দেখলে কী এমন ক্ষতি হত তোমার?
প্রচলিত ধারার বিপ্রতীপ চিন্তার সঙ্গে
তোমার সহাবস্থান কি কোনোদিনও হবে না
এমন-কী সমান্তরালও?
বিচ্ছিন্ন সুখ? আমার চেতনার ব্যবচ্ছেদেও
খুঁজে পাবে না তুমি
মাংসাশীদের কাছে নিজের কদর বাড়াতে চাও
তো ওই রঙিন অ্যাকুরিয়ামই হবে
তোমার সুখের(?) নীড়


পরিচিতি

 

মং হ্লা প্রু পিন্টুর জন্ম ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দের ৬ মার্চ বর্তমান কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের মধুখালি রাখাইন পাড়ায়। তাঁর বাবার নাম স্বর্গীয় আ থোঁই হ্রী (মাস্টার), মায়ের নাম স্বর্গীয়া চিং ওয়ান প্রু। তিনি লেখালেখি শুরু করেন উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময়। প্রথম কর্মজীবনে তিনি বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন (১৯৯০ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত), পরে (১৯৯৯) শিক্ষকতায় চলে আসেন। তিনি বর্তমানে কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলা সদরে অবস্থিত রামু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক হিসাবে কর্মরত আছেন।

কোন মন্তব্য নেই: